শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। এই দুটি বাক্য এখন মূল্যহীন হতে বসেছে। সম্প্রাতি শিক্ষক ও শিক্ষার চরম দূ:সময় চলছে। যদিও এ সরকার ক্ষমতায় থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক কাজ করছে তবুও একথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, শিক্ষা আজ বন্দী রয়েছে আমলাতন্ত্রের বাক্সে।
আমলারা যেভাবে চালাচ্ছে শিক্ষাবান্ধব সরকার ক্ষমতায় থেকেও তারা সেভাবেই চলছে। বাস্তব অবস্থায় এখন দেখে মনে হয়, রাজনীতি আমলাতন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়ে পডেছে, আত্নসমর্পন করতে হচ্ছে রাজনীতিবিদদেরকে।
শিক্ষাবান্ধব সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ঘোষনা দিয়েছিল ঘরে ঘরে চাকরি দিবে। সরকারি সিদ্ধান্তের সাথে তালমিলিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফরের সাথে বেসরকারি সংস্থা ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদ সূষ্টি করে জনবলকে চাকরি দিতে থাকে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদ সূষ্টি করে যখন জনবলকে চাকরি দিতে থাকে ঠিক তখনই আমলারা কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে থাকে।
যেসব প্রতিষ্ঠান পদ সৃষ্টি করে যথন জনবলকে চাকুরি দিতে থাকে ঠিক তখনই আমলারা কূট-কৌশলের অংশ হিসেবে ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের পদ সৃষ্টির সাথে শর্ত হিসেবে লিখে দেয় আগামি দুই বছর স্ব-অর্থায়নে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এই শর্তেও যথন পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগ বন্ধ করা গেল না ঠিক তখনই পদ সৃষ্টির সাথে শর্ত হিসেবে লিখে দেওয়া হল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। এরপরও যখন পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগ বন্ধ করা গেল না ঠিক তখনই পদ সৃষ্টির সাথে শর্ত হিসেবে লিখে দেওয়া হল এম.পি.ও চাওয়া যাবে না এবং নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে।
এসব শর্তে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে অথবা শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এম.পি.ও নামক সোনার হরিণটি ধরতে পেরেছে। যারা নিয়ম-নীতির প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে শর্তের মেয়াদ পৃর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল তাদের ভাগ্যে জুটে গেল আমলাতন্ত্রের ১৩-১১-২০১১খ্রি. তারিখের প্রজ্ঞাপন। আমলা মহোদয়গণরা সরকারকে দেখালেন যে আমরা আপনাদের পদ্মা সেতুর জন্য কত টাকা সাশ্রয় করে দিলাম।
পুরস্কার হিসেবে আমলারা পেলেন পে-স্কেল এবং পদ সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশী পদোন্নতি আর শিক্ষক সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসল চরম দুরাবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষদের সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের সাথে আলোচনা করে অতিদ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের নির্বাহী প্রধানের নির্দেশও আজ আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় বাধাঁ পডেছে। এসব সমস্যার অতিদ্রুত সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক : জহুরুল ইসলাম, সহকারি অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, মধুপুর কলেজ, টাংগাইল।