জাবি কর্তৃপক্ষের সম্মতিপত্রশিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা সংকটের সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে লিখিতভাবে সম্মত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছে তারা। এ সম্মতিপত্রের একটি অনুলিপি এসেছে। তবে ওই সম্মতিপত্রে মামলার বাদী রাষ্ট্র বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকের স্বাক্ষর রয়েছে এতে।
এর আগে মামলা প্রত্যাহারের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার বলে আসছিল, মামলার বাদী রাষ্ট্র। তাই তা প্রত্যাহারের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে নেই। কিন্তু আশুলিয়া পুলিশ ও আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। মামলার এজাহারে অভিযোগকারী হিসেবে তার নাম উল্লেখ ছিল। ওসি আব্দুল আউয়াল গত ১৬ জুলাই বলেন, ‘সাধারণত যিনি অভিযোগ করেন, তিনিই মামলার বাদী হয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, তিনিই এ মামলার বাদী।’
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে আটটায় মামলা প্রত্যাহারসহ চারদফা দাবিতে চতুর্থদিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সোয়া ১১ টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ শিথিল করেন। পরে বিকাল পাঁচটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-প্রশাসনের মধ্যে কয়েক দফার আলোচনাটি রাত সোয়া ১টার দিকে শেষ হয়। রাতেই লিখিত সম্মতিপত্র দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সার্বিক বিষয়ে শিক্ষক সমিতি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের সফল আলোচনার প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবাদী মামলা (আশুলিয়া থানায় মামলা নং-৫৬, তারিখ ২৭/০৫/২০১৭) যথাশীঘ্র প্রত্যাহারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মতি প্রদান করছে। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা ও হয়রানির জন্য প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করছে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে প্রশাসনের দুজন পদস্থ ব্যক্তি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের আলোচনায় শিক্ষার্থীরা পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রস্তাব দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণে রাজি হয়। আগামী ৭ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আদালতে হাজিরার তারিখ রয়েছে। ওইদিনই যাতে মামলার নিষ্পত্তি হয় সেজন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবসময় সম্মানজনক সমাধানের চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সব পক্ষের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে যৌক্তিক ও সম্মানজনক সমাধান হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসু হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংকটের সম্মানজনক সমাধান হয়েছে। তাই আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছি।’
প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে পুলিশি হামলার জেরে উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে ৫৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’ ও ’প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।