মূল কপির বিড়ম্বনায় অনলাইনে এমপিওর আবেদনকারীরা - দৈনিকশিক্ষা

মূল কপির বিড়ম্বনায় অনলাইনে এমপিওর আবেদনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

dshe bhabanশিক্ষক হয়রানী বন্ধ ও দুর্নীতি-অনিয়ম এবং এমপিও জালিয়াতি ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর ১০ জুন থেকে অনলাইনে সকল প্রকার এমপিওভুক্তির আবেদনের নিয়ম চালু করলেও বাস্তবে শিক্ষকদের হয়রানি বেড়েছে বহুগুণ। অনলাইনে এমপিওর ফলে দুর্নীতি আর শিক্ষকদের হয়রানীর ঘাট বেড়েছে বলেও মন্তব্য করছেন ভুক্তভোগীরা। অনেক হয়রানির অন্যতম হলো হাতিয়ার মূল কপি জমা দেওয়া ও নেওয়া।

নিয়োগপরীক্ষার নম্বরপত্র ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পত্রিকার মূল কপির বিরম্বনা নিয়ে দৈনিকশিক্ষার ভুক্তভোগী পাঠকের মতামত ও তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায় শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকুরী পাওয়ার আগে থেকেই ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত পত্রিকা সংরক্ষণ করে রাখেন না বা রাখার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু নিয়োগ হলে এমপিওর আবেদনের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস এই তিন স্থানের জন্য রীতিমত স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা মিলে ছয় কপি মূল পত্রিকা জমা দিতে হচ্ছে।

এক সাথে পাঁচ সাত জনের নিয়োগ হলে তাদের প্রত্যেককে ছয় কপি করে পত্রিকা দিতে হচ্ছে। এতো বিপুল পরিমান অতিরিক্ত পত্রিকা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা যায় না। আবার সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিসে গিয়েও সর্বোচ্চ ৫/১০ কপি পত্রিকা পাওয়া যায়। অপরদিকে একবার না হয় যেকোন উপায়ে সংগ্রহ করে আবেদন জামা দেওয়া সম্ভব হলো। সেই আবেদন আঞ্চলিক শ্ক্ষিা অফিস বাতিল করলো। ফলে তার তিন কপি আবেদন তিন অফিসে জমা পরে আটকে যায়। তাকে পুনরায় নতুন করে আবেদন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার ওই ভুক্তভোগীর কি উপায়?

তবে, অনলাইন চালুর  ফলে দুএকজন শিক্ষক কোনও ঘুষ বা ঝামেলা ছাড়াই এমপিও পেয়েছেন এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

মূল নম্বর পত্রের বিরম্বনা ঃ এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের মূল নম্বরপত্র ছাড়া কোন আবেদন গ্রহণ করেন না রাজশাহীর আঞ্চলিক উপ-পরিচালক (ডিডি)। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূল নম্বর পত্র নিরাপত্তার স্বার্থে এক কপিই তৈরী করেন। সেই কপি যদি ডিডিকে দিয়ে দিতে হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানের অফিসে কি থাকলো। যাচাইয়ের জন্য দেখানো যেতে পারে কিন্তু একেবারে জমা নিয়ে নিলে কেমন অবস্থা।

রাজশাহী অঞ্চলে অযৌক্তিক বাতিলের ছড়াছড়ি : শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নীতিমালায় নাই তথাপি এর অজুহাতে প্রতিদিন শতশত আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। যেমন নীতিমালায় কোথাও প্রতিষ্ঠানের শেষ এমপিও চাওয়া হয় নাই। তথাপি শেষ এমপিও কপি সংযুক্ত না করার অভিযোগে অনেক আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবেদনকারী শিক্ষক জানান, তিনি বিধি মোতাবেক উচ্চ মাধ্যমিকের শূন্যপদে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে অনলাইনে আবেদন করেছেন। অধ্যক্ষের সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় মূল নম্বরপত্র মাত্র এককপি থাকা সত্ত্বেও সেইটাই নিয়ে এবং পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করে প্রতি কপি ২০০ টাকা করে দিয়ে বিজ্ঞপ্তির মূল পত্রিকা কিনে আবেদন করেছিলেন। ডিডি অফিস থেকে সেই আবেদন বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বাতিলের কারণ লেখা হয়েছে ১) শেষ এমপিও কপি সংযুক্ত নাই। ২) পদত্যাগকারী শিক্ষকের নিয়োগ ও যোগদানপত্র নাই (পদত্যাগের কারনে পদ শূন্য হয়েছে)। অথচ ঘোষিত নীতিমালার কোথাও উক্ত বিষয় দুটির চাহিদা দেওয়া নাই। আবার নিয়োগকালীন অধ্যক্ষ হঠাৎ মারা গেছেন। এবার মূল নম্বরপত্র পুনরায় কিভাবে পাওয়া যাবে আবার মূল পত্রিকা কেমন করে জোগার হবে?

তিনি বলেন, নীতিমালায় নাই তথাপি ডিডি ওই দুটি কাগজ না থাকায় সমস্যা মনে করেছেন। ঠিক আছে আবেদনটা বাতিল না করে কাগজ দুটি চেয়ে পাঠালেই পারতেন। তাহলেই এতোটা ভুগতে হতো না। কিন্তু অনলাইন আবেদন বাতিল এবং আবেদনের হার্ড কপি ফেরৎ না দিয়ে নতুন করে জমা করার নির্দেশ এটা চরমন অমানবিক। হয়তো এই সমস্যার কারনে আর আবেদই করা সম্ভব হবে না।

উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া অপর একজন বলেন, হয়রানি কাকে বলে এটা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস নির্ধারিত হারে উৎকোচ না পেলে কোন ফাইল ফরওয়ার্ড করছেন না। আবার বাতিল আবেদনের হার্ড কপিতে মূল কপি জমা থাকায় নতুন করে মূল কপির বিরম্বনা। বিশেষ করে মূল কপির বিরম্বনা রোধ না হলে অনেক আবেদনকারীই পুনরায় আবেদন করতে সক্ষম হবে না।

শফিকুল নামের নাটোরের এক আবেদনকারী জানান, তার নিয়োগকালীন অধ্যক্ষ মারা গেছেন। কলেজে মুল নম্বরপত্র আছে এক কপি। বর্তমান কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই মূল নম্বরপত্র দিবেন না। তারা আবার স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আবেদনকারী। এখন তাদের উপায়কি, এ প্রশ্নের উত্তোর পাচ্ছেন না কোথাও।

এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নাই।

এমপিওর ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতা আবু জামিল মো. সেলিম বলেন, সরকারি কলেজ ও স্কুল শিক্ষক এবং উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার যাদের কারোরই এমপিও শিক্ষকদের কষ্ট ও ভোগান্তি সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই দু:খজনক হলো তারাই এমপিওভুক্ত করার দায়িত্বে। দেশের মোট শিক্ষকের শতকরা ৯৮ ভাগ শিক্ষক এমপিওভুক্ত সুতরাং মাউশি অধিদপ্তর ও জেলা উপজেলায় অভিজ্ঞ ও সৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বসাতে হবে।

তিনি বলেন, এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারি পরিচালক ও আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগ হয় সরকারি স্কুল কলেজ থেকে।

আবু জামিল মো. সেলিম আরো বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে ওই পুরোনো পদ্ধতি বাতিল করে এমপিওর দায়িত্বে সরকারি শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিজ্ঞ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ও বসাতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই্।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036518573760986