ভাষাসৈনিক ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেছেন, ‘বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইন মানা হচ্ছে না। আইনে আছে, দেশে গাড়ির নাম্বার প্লেইট হবে বাংলায়, কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ এই আইন ভঙ্গের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেন না।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১শে ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় নিজের বক্তব্যে এমন কথা বলেন অধ্যাপক আজিজ।
ভাষাসৈনিক আবদুল আজিজ আরও বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে বিশেষ দিন হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বে আমরা ভাষাভিত্তিক জাতি হিসেবে পরিচিত পেয়েছি। আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের আরেকটি দেশ, সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রভাষা হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষার এই অর্জন অনন্য।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিয়া ও দেবারতির সঞ্চালনায় সভায় অধ্যাপক আবদুল আজিজ আরো বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে হুমায়ুন আহমেদের নাটক দেখার জন্য কলকাতার মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন আমরাই তাদের অনুষ্ঠান দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছি। কারণ, আমাদের টেলিভিশনগুলোতে প্রচারিত অনুষ্ঠানের মান নি¤œমানের। দর্শক ভিনদেশীয় টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে মনোযোগী হওয়ার আমাদের ভাষার বিকৃতি ঘটছে।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের আগেও এ ভূখণ্ডে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সব আন্দোলন স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়নি। যতোটা ছড়িয়েছিল বায়ান্নর আন্দোলন। এখানেই বায়ান্ন আলাদা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই বাংলার স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল।’
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিব প্রসাদ সেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এম রবিউল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ানা সামি প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তাহের বিল্লাল খলিফা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুরেশ রঞ্জন বসাক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল হক চৌধুরী, রেজিস্ট্রার ফজলুর রব তানভীর, পরিচালক (প্রশাসক) তারেক ইসলাম, সহকারি রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা লোকমান আহমদ চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও বক্তব্য প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর আগে, সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রভাতফেরি মাধ্যমে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে দেয়ালিকা উন্মোচন করা হয়।