গতানুগতিক শিক্ষাধারার বাইরে এসে এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছে ভিন্নধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়গুলো। বিশেষ করে কর্মমুখী ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন বেশি দেখা যায়। তাই এসএসসি বা এইচএসসি পাস করার পর কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। আর তাই তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সম্ভাবনাময় পেশাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর বর্তমান সময়ে তেমনি একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র হলো মেডিক্যাল টেকনোলজি সেক্টর; যার ভিতর বেশ কিছু বিষয়ের ওপর চাহিদা অনুযায়ী নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। চিকিত্সা সেবায় মূলত ডাক্তারকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক শুধু ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। প্রত্যেকটি বিভাগে ডাক্তারদের সহকারী প্রয়োজন হয়। এসব বিশেষজ্ঞ কর্মীই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসাবে পরিচিত।
কোথায় ও কী বিষয়ে পড়বেন
বর্তমানে বাংলাদেশে মেডিক্যাল টেকনোলজির ওপর সরকারি পর্যায়ে ৭টি প্যারা-মেডিক্যাল ও ৮টি ম্যাটস আছে। প্যারা-মেডিক্যালগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল ও ঝিনাইদহে অবস্থিত। ম্যাটসগুলোর মধ্যে আছে বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ঝিনাইদহে। ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে প্যারা-মেডিক্যাল ও ম্যাটসের বিষয়গুলোর ভিতর আছে ল্যাব, ফার্মেসি, ফিজিওথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ডেন্টাল ও রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং। প্রতিবছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে প্যারা-মেডিক্যাল ও ম্যাটসে ভর্তি পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু বেসরকারি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে যেখানে চাইলে আপনি চাহিদা মতো নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়তে পারেন।
চাহিদা ও কাজের ক্ষেত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে প্রতি একজন গ্রাজুয়েট চিকিত্সকের বিপরীতে পাঁচ থেকে ছয় জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে ২ লাখেরও বেশি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলা থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ক্লিনিকের সংখ্যাও অনেক। আরও রয়েছে প্রায় ১৮০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক, অসংখ্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সংখ্যক মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দরকার। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট কাজ করছেন। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এই পেশাজীবীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের কাজের ব্যাপক সুযোগ আছে। এখানে কেবল দরকার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিদেশে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের চাকরি সুবিধা অনেক ভালো।সুযোগ-সুবিধা
সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিত্সা সেবায় টেকনোলজিস্টদের চাকরির বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী ন্যূনতম এসএসসি পাস করার পর মেডিক্যাল টেকনোলজির যে কোনো বিষয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা শেষ করার পর শুরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেতে পারে। পরে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।