মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ২৩টি ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’ বা ভালো শিখন পদ্ধতি চর্চা করে চলেছে। ফলে স্কুলটিতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশও হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্কুলটিতে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি, ডিজিটাল সেবা বহুমাত্রিক এসএমএস সেবা, অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম, মেসেজিং পদ্ধতি, ‘এই দিনে’ নামক তথ্য বোর্ড, সিসি ক্যামেরায় শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সততা দোকান, মহানুভবতার দেয়াল, অভিভাবক আনন্দ পাঠাগার, গুণীজন গ্যালারি, আলোকিত আচরণ সংগ্রহশালা, শ্রেণিকক্ষের নামকরণ, শাখার নামকরণ, শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, মিড ডে মিল কার্যক্রম, শিক্ষকদের ড্রেস কোড, বিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট, বিদ্যালয়ের নামে ফেসবুকের পাতা, দেশপ্রেমের আয়না, ডিজিটাল ঘণ্টা, টিফিনের টাকা সঞ্চয় বক্স, পাখির অভয়াশ্রম। এ ছাড়া রয়েছে দুর্বল শিশু শনাক্ত করে শিক্ষকদের মাধ্যমে বিশেষ পাঠদান ব্যবস্থা, শপথ পাঠ, সামাজিক সবজি ক্ষেত, প্রকৃতির সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক পাঠ দান, সরকার নির্ধারিত সহশিক্ষা কার্যক্রম, কুইজ ক্লাব, ভাষা ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, উপকরণ কর্নার, গণিত ল্যাব, প্রতীকী চিড়িয়াখানাসহ দৈনিক সমাবেশে একটি করে নীতিবাক্য পাঠ। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভারী ব্যাগ বহনে নিরুৎসাহিত করাসহ তিন কেজি ওজনের ব্যাগ বহনে নিষেধাজ্ঞা এবং নাট্যাভিনয়ের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের’ অংশ হিসেবে তিনি স্কুলে ২৩টি উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, ‘২০১১ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগদানের পর ২০১৪ সালে স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি এ উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৭০২ ছাত্রছাত্রীকে এসব উদ্ভাবনী ও বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রম শেখাতে ১৫ শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। সবার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। সব সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘নানা উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে তাদের শিক্ষা দান করছেন। ডিজিটাল হাজিরা, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাসসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করায় তারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, সাবলীল ও আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান করানোয় তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার ব্যাপারেও অনেক বেশি উৎসাহী।’ নাজমা পারভীন, সাবিনা ইয়ামিন, শিউলি খাতুনসহ একাধিক অভিভাবক জানান, ‘বিদ্যালয়টি শুধু তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করছে না। তাদের আদর্শ মা হিসেবে গড়ে তুলতেও সহায়তা করছে।’ কারণ হিসেবে তারা বলেন, ‘স্কুলের গেটে তাদের (অভিভাবকদের) জন্য রয়েছে ‘আনন্দ পাঠাগার’। শিশুদের জন্য অপেক্ষাকালে তারা শিশুবিষয়ক গল্পের বইসহ বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করছেন।