দোকানে প্রয়োজনীয় পণ্য থরে থরে সাজানো। কিন্তু কোনো বিক্রেতা নেই। ক্রেতারা পণ্য কিনে পণ্যের গায়ে লেখা দাম দেখে হিসাব করে নির্ধারিত বাক্সে টাকা রাখছে। পণ্য নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে গত প্রায় এক বছর যাবৎ চলছে ‘সততা স্টোর’ নামের দোকান ।
সততা স্টোরে খাতা, কলম, পেনসিল, ইরেজার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং-পেনসিলসহ শিক্ষাসামগ্রী এবং চিপস, বিস্কুটসহ খাবার জিনিস সাজানো থাকে। সব পণ্যের দাম বাজারমূল্যের সমান এবং কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের চেয়ে কম।
মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে স্থাপিত এই দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার বিষয়েও নীতিমালা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, দোকানে ঢোকার সময় রেজিস্ট্রার খাতায় শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। ক্রেতাকে একটি কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে টেবিলে রাখা খামে ভরে নির্ধারিত ক্যাশ বাক্সে ফেলতে হবে।
শিক্ষা উপকরণের সমপরিমান টাকা সাথে আনতে হবে, ভাংতির কোন সুযোগ নেই বিধায় প্রয়োজনে ভাংতির সমমূল্যের চকলেট বা অন্য কোন উপকরণ নিতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে সততা স্টোর থেকে পণ্য কিনতে হবে, একসাথে দুইজন প্রবেশ করা যাবে না। চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া গেলে সেখানে রাখা আরেকটি রেজিস্ট্রারে লিখে অগ্রিম চাহিদা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
দোকান পরিচালনা কমিটি সাধারণত এক দিন পর পর স্টোর পর্যবেক্ষণ করেন। কমিটি পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ, নিয়মিত পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা, পণ্যের গায়ে মূল্য লেবেল লাগানোর কাজ করে থাকেন।
আর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ মনিটরিং কমিটি সততা স্টোরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করেন । ওই কমিটি প্রতি সপ্তাহে একবার বৈঠক করে হিসাব যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা করে প্রয়োজনীয় অর্থ পরিচালনা কমিটির কাছে দেন।
গত ২৯শে মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এই ‘সততা স্টোর’ উদ্বোধন করেন।
‘সততা স্টোর’-এর মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেঃ কর্নেল কাজী শরীফ উদ্দিন জানান, প্রকৃত জ্ঞান শুধু পুঁথির মধ্যে পাওয়া যাবেনা, সততা শুধু জ্ঞানেরই অংশ নয় চরিত্র গঠনের মূল স্তম্ভ এবং আদর্শ জীবনে গঠনের মূল মন্ত্র। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে অসংখ্য জ্ঞানের উপকরণ। প্রত্যেক জায়গা হতে শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মূল উদ্দেশ্য ‘আদর্শ মানুষ তৈরি করা’। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীর অন্তরে সৎ গুনাবলীর সমাবেশ ঘটুক। এই মহৎ উদ্দেশ্যর ক্ষুদ্র প্রয়াসই ‘সততা স্টোর’।