যখন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলানো যাবে না - দৈনিকশিক্ষা

যখন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলানো যাবে না

বিভাষ বাড়ৈ |

দুর্বল নীতিমালার সুযোগে যখন তখন প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছে মতো বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের পথ বন্ধ হতে যাচ্ছে। নাম পরিবর্তনের হিড়িক বন্ধে কঠোর নীতিমালা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির অনুমোদন পেলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে নতুন নীতিমালা। জানা গেছে, নীতিমালা সর্বোচ্চ কঠোর ও যুগোপযোগী করা হবে। নাম পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও তা করতে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে ৩০ লাখ থেকে দেড়কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারী তহবিলে জমা দেয়ার শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই যে হারে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের আবেদন আসছে তার অধিকাংশই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। অথচ প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা যে কোন সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তাদের মতো করে একের পর এক আবেদন নিয়ে আসছে। আবেদন আর এ সংক্রান্ত তদ্বিরের ভারে বিব্রত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। এসব তদ্বির সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবও। নতুন নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করতে মন্ত্রণালয়ে অসংখ্য আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বিগত দিনে অনেক সরকারী-বেসরকারী ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। নাম পরিবর্তনে নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। যার কাজও প্রায় শেষ। একটি প্রস্তাব কমিটির সদস্যেদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই নীতিমালাটি মন্ত্রীকে দেখানো হবে। তার সম্মতি পেলেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

এ কাজ দ্রুতই করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, দেখেন একটা নীতিমালা আছে। কিন্তু দরকার একটি যুযোপযোগী নীতিমালা। নাম পরিবর্তন করা যাবে তবে সেটার জন্য একটা ভাল নীতিমালা দেশে থাকার খুব প্রয়োজন। নাম পরিবর্তন হবে কিন্তু তারও তো যৌক্তিকতা থাকতে হবে। যত্রতত্র যেমন ইচ্ছে তেমন করে নাম পরিবর্তন করলে শিক্ষার সুনামও নষ্ট হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না কোন কোন বিষয় চূড়ান্ত হবে। কারণ যেসব বিষয় প্রস্তাব করেছি তাতো পরিবর্তন হতে পারে। দ্রুতই এটি হবে তবে আমরা নাম পরিবর্তনে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে চাই।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে কঠোর হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যত্রতত্র নাম বদল ঠেকাতেই মূলত এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা। খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করতে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে ৩০ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারী তহবিলে জমা দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত চারটি কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। ফি’য়ের পরিমাণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে আরও বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, সরকারের মূল লক্ষ্য একটি যুযোপযোগী ও কঠোর নীতিমালা করা। যাতে অকারণে প্রভাব খাটিয়ে নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টাতে না পারে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এ ছাড়া নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা যাচাই করতে চার স্তরের একটি কমিটিও করা হবে। এ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেই একটি নীতিমালার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, পৌরসভার বাইরের নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে ৩০ লাখ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪০ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০ লাখ ও ডিগ্রী স্তরে এক কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া পৌরসভার ভেতরে নিম্ন মাধ্যমিকে ৫০ লাখ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫০ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০ লাখ ও ডিগ্রী স্তরের জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিকে ৬০ লাখ, মাধ্যমিকে ৭০ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিকে এক কোটি ও ডিগ্রী স্তরের জন্য দেড় কোটি টাকা জমা দিতে হতে পারে।

একইভাবে কোন ব্যক্তির নামে নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানে তহবিলে জমা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকদের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণে কোন অর্থ জমা দিতে হবে না বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি বিধান আছে যা খুবই দুর্বল। বর্তমানে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ফি ছয় লাখ টাকা, মাধ্যমিকে ১০ লাখ ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ১৫ লাখ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ডিগ্রী স্তরের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন নির্দেশনা নেই। এ ছাড়া এ বিষয়ে আর কোন বিধিনিষেধ নেই। ফলে এমন দুর্বল বিধির ও যথাসামান্য টাকা জমা দিয়ে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে লিখিয়ে নিচ্ছেন।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য প্রথমে ম্যানেজিং কমিটি বা গবর্নিং বডির অনুমোদন নিতে হবে। এরপর বহুল প্রচারিত দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। নাম পরিবর্তন আবেদন যাচাই-বাছাই করবে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি। একইভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ডিগ্রী কলেজ বা মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে আরেকটি কমিটি কাজ করবে।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হবে। চূড়ান্তভাবে এ কমিটি নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করলেই তা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই মাসেই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নাম পরিবর্তনের জন্য কয়েক শত আবেদন জমা হয়েছে। সব সময়েই এমনটা হচ্ছে। কমিটির এক সদস্য বলছিলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিগত দিনে অনেক সরকারী-বেসরকারী ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এবার নাম পরিবর্তন নিয়ে একটা ভাল নীতিমালা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতেও এ ইস্যুতে সরকারকে কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়।

এক প্রশ্নের জবাকে কমিটির ওই সদস্য আরও বলেন, বর্তমানে কেবল টাকা দিলেই নাম পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এবার কেবল টাকা দিয়েই হবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে বয়সও বিবেচনায় নেয়া হবে। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ একটি বয়স থাকবে। তার বেশি বয়স হলে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের অনুমতি দেয়া হবে না। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনে থাকছে বাড়তি বিধিনিষেধ।

এর আগে গত ২০ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহবার হোসেনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতিরিক্ত সচিবকে (কলেজ) আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা), যুগ্ম সচিব (কারিগরি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন)। উপসচিবকে (কলেজ) কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।

 

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073800086975098