যেসব কারণে শিক্ষকরা আজ অবহেলিত ও লাঞ্ছিত - দৈনিকশিক্ষা

যেসব কারণে শিক্ষকরা আজ অবহেলিত ও লাঞ্ছিত

শরীফুর রহমান আদিল |

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারেনা, যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি তত বেশী উন্নত – এসব প্রবাদগুলো যাকে ঘিরে রচিত হয়েছে তিনি হলেন ‘শিক্ষক’। জন্মের পর একটা শিশুর অন্তর থাকে সাদা কাগজের মতো আর মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রাক-পূর্ব প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে এ সাদা অন্তরে কিছুটা কালি পড়ে। এরপর প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে একেবারে কর্মজীবন এমনকি মৃত্যুকালীন সময়ের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থেকে তার অন্তরাটা অভিজ্ঞতায় ভরপুর করে তুলে।

আবার শিক্ষকের কাছ থেকে শিখে আমরা আজ কথা বলতে পারি, পৃথিবীকে বুঝতে পারছি, জানতে পারছি সমাজকে, উপলব্ধি করতে পারি ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিৎ-অনুচিৎ প্রভৃতি পরিশেষে শানিত করেছি আমাদের মেধা আর মননকে। সমাজকে আলোকিত করার, সমাজ থেেেক যাবতীয় কু-সংস্কার, কু-প্রথা, অন্ধকার দূর করে এই মহান শিক্ষকেরা। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই মনে হয় এশিয়ার মিসাইল ম্যান খ্যাত সদ্য প্রয়াত ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন-বাবা, মা,আর শিক্ষক এই তিনজন সমাজে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শিক্ষকদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই মনে এ কথাটা বলেছিলেন আর বলবেননাই বা কেন একজন শিক্ষার্থী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টাই যে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকে একথাটা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা; এসময়ে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষক থেকে চাল-চরণ, আচার- আচারণ, কথা-কাজ, পোশাক-পরিচ্ছেদ, স্টাইল প্রভৃতি অনুকরণ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এতোকিছুর পর আজ পেশাজীবনে সবচেয়ে অবহেলিত, বঞ্ছিত আর নির্যাতিত এবং অপমানিত সম্প্রদায়ের নাম শিক্ষক সমাজ। কিন্তু কেন এই শিক্ষকরা আজ অবহেলিত কিংবা বঞ্চিত?

সরকারের উদাসীনতাঃ বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষকসমাজ অবহেলিত কিংবা লাঞ্চিত হওয়ার প্রধান কারনই হলো সরকারের উদাসীনতা। তা নাহলে পে-স্কেল প্রাপ্তির জন্য শিক্ষকদের আন্দোলন করতে হবে কেন? অথবা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ৬ মাস রাস্তায় থাকতে হবে কেন? কেন আজ ছাত্র বহিস্কার না হয়ে শিক্ষক বহিস্কার হচ্ছে? ছাত্রদের নকলের প্রবণতা বন্ধ হলেও শিক্ষক কেন বোর্ডে গিয়ে প্রশ্নোত্তর লিখে দিবে? কেন আজ ছাত্রদের পাস না করালে শিক্ষককে শো-কোজ করা হয়? যেখানে ছাত্র কিংবা তার অভিভাবকদের শো-কোজ করানোর প্রয়োজন ছিল। কেন আজ ছাত্রদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার আইন তৈরী হলো? সরকার যেখানে নতুন নতুন বিষয় কিংবা প্রয়োজনাতিরিক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেয় সেখানে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকলে কেন শিক্ষকের এমপিও বন্ধ হয়ে যাবে?

নিম্ন বেতনঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হলো বেসরকারি বলতে গেলে বলা যায় দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীরাই এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে কিন্তু এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন খুবই নগন্য অর্থ্যাৎ সরকার এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের কেবলমাত্র বেসিক বেতনটাই দেয় এ বেতন দিয়ে তাদের পক্ষে সমাজের অন্যান্য মধ্যবিত্তের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারছেনা তাই সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না উপরন্তু তাদের লাঞ্চিত হতে হচ্ছে। আর সবচাইতে ভয়াবহ পরিস্থিতি হলো কিন্ডারগার্টেন আর একাডেমীর শিক্ষকদের। এসব শিক্ষকরা ১০০০ টাকা মূল্যের ও চাকরী করছে ফলে শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে পৌছেছে। ফলে এসব শিক্ষকেরা তাদের উর্পাজন বাড়ানোর জনসমাজে যেকোন কাজই করতে দ্বিধাবোধ করছেনা ফলে শিক্ষকের মান বাড়বে কিভাবে?

অতি পাস দেওয়ার মানসিকতাঃ শিক্ষক লাঞ্চনা ও শিক্ষকদের অবহেলার অন্যতম এক কারণ হলো অতি মাত্রায় পাশ। ১০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য না অথচ সে পাচ্ছে এ প্লাস! এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতিবাদ কিংবা পরীক্ষা ন দিয়েও এ+ পাওয়ার ঘটনা অতি পাশ ও অতি নম্বর দেওয়ার প্রবণতাকে প্রমাণিত করে। শিক্ষার্থীদের মনে এ অপ্রিয় সত্য কথা জমা হয়ে গিয়েছে যে না পড়েও কেবল আবোল তাবোল লিখলেই পরীক্ষায় পাশ করা যায়। তা না হলে বিগত বছরগুলোতে পাশের হার ৮০ শতাংশ হবে কেন? আর যদি না পড়েও পাশ করা যায় তবে শিক্ষকের দেয়া ভয় কিংবা শিক্ষকের কথা মানবে কেন শিক্ষার্থী? কম নম্বর দেওয়ার ফলে শিক্ষককে পরবতী পরীক্ষার খাতা না দেওয়া কিংবা বোর্ড থেকে বেশী নম্বার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া এসবই এষসনর ছাত্রদের মাঝে ওপেন সিক্রেট তথ্য। অতি পাশের হারই শিক্ষক সমাজকে অবহেলা কিংবা লাঞ্চনা শিকার হওয়ার অন্যতম এক কারণ।

বাড়ির পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শিক্ষকতা পেশাকে একটি মহান পেশা হিসেবে ধরে নেওযা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষকতা এ মহান পেশাকে কলংকিত করছে বাড়ির এমনকি ঘরের পাশেগড়ে উঠা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি যে নিয়ম রয়েছে তাতে প্রতি ১০,০০০ জনসংখ্যার জন্য একটি কলেজ স্থাপিত হওয়ার কথা এবং প্রতি ৭,০০০ জনসংখ্যার জন্য একটি করে মাধ্যমিক স্কুল স্থাপিত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই চিত্রটি ভিন্ন প্রতিটি গ্রামে ৫-৬টি স্কুল ও ২ কলেজ এমনকি বাড়ির পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেেেছ নব্য লাখপতিরা। ফলে বর্তমানে চাকুরীর বাজার কঠিন হলেও শিক্ষকতার বাজার হচ্ছে অতি সহজ অবস্থাটা এমন দাড়িয়েছে যে কোন কিছু না করলে কিংবা বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও এসএসসি পাশ একজন বেকার ও বিদেশ যেতে প্রত্যাশী তারা সময় কাটানোর জন্য এসব কিন্টারগার্টেন কিংবা গড়ে উঠা বিভিন্ন একাডেমী কিংবা স্কুল গুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছে আর মূল শিক্ষকরাও এতে চাপে পড়ছে সরকার কিংবা ম্যানেজিং কিংবা গর্ভনিং বডির। এবং শিক্ষক মান হারাচ্ছে তার সমাজে। কারণ আমাদের সমাজে যেখানে সেখানে এতবেশী শিক্ষক দেখা যায় যে এরকম অন্য কোন ব্যাংকার, পুলিশ সরকারী অন্য ৯ম বা ১০ গ্রেডের কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়না; তাই অতি শিক্ষক কিংবা অতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক অবমূল্যায়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। কারণ যে পেশার লোকদের কোন অভাব নেই তাদের আর কি দরকার। আর তাদের মূল্যায়নই বা কি দরকার ? করলেও আর কয়জনকে করবে?

অল্প শিক্ষিত পরিচালনা পর্ষদঃ আমাদের দেশের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পরিচালনা করে ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গর্ভনিং বডির লোকেরা কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার সভাপতি হয় স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা অণ্য কোন রাজনৈতিক দলের শক্তিশালী নেতা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপর গর্ভনিং বড়ির নিযার্তন আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটের দৈরাতেœ শিক্ষক সমাজ আজ বড়ই অসহায় এবং নিরুপায়। গর্ভনিং বড়ির বা স্কুল ম্যানেজিং কমিটের কথা মনে হয় রিমান্ডের চেয়েও ভয়ংকর। কয়জন জন উন প্রতিদিন টেলিভিশনে আসতেন মানুষকে শিক্ষা আর বিনোদন দিতে আর আমদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সদষ্যরা প্রতিদিন আসেন শিক্ষকদেও নিত্য নতুন নির্যাতন আর কারাভোগের ফন্দি নিয়ে! এরা কেউ কেউ ৮ম শ্রেণী পাশ না করলেও এরা আজ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বা, কলেজের গভনিং বডির সদস্য বা, সভাপতি! এদের কার্যকলাপ এমন যে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বা, গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল। এদের কারণে আজ স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষকরা সবচাইতে লাঞ্ছিত আর বঞ্ছিত। প্রাচীন এক প্রবাদ ছিলো, পিতা-মাতা আর শিক্ষকদেও মানা প্রকৃতির প্রথম নিয়ম আর এখন মনে হয় গর্ভনিং বডির সদস্য, পুলিশ আর ছাত্রদের কথা মানাই হলো বাংলাদেশের প্রথম আইন । যারপ্রেক্ষিতে মনে হয় অস্ত্র দিয়ে ইশ্বরের নগরী তৈরী করা আর নৈতিকতাকে ঘরে পাখীর সাথে বন্দী করে রাখাটাই একমাত্র লক্ষ্য যাতেকরে তাদের এই অবার্চনীয ডাক পশু-পাখি ছাড়া আর কেউ না শনে। এদের আচরণ আর শিক্ষকদের মুখ বুঝে সহ্য করা দেখে বিস্মিত মনে প্রশ্ন জাগে শিক্ষক সম্প্রদায় কি এতিম? এরা কি শুধুই মানুষের সহানুভুতি আর করুণার উপর নির্ভর করবে? এদের সামনে কোন অনৈতিক ঘটনা ঘটে গেলেও কি তারা মুখ দ্বারাও কি প্রতিবাদ করতে পারবেনা?

শিক্ষক নয় কথা শুনে রাজনৈতিক নেতারঃ পৃর্বে শিক্ষকের কথা সকল ছাত্রমনোযোগ দিয়ে শুনতো তাই সবাই শিক্ষকদের সর্বাধিক সন্মান করতো। কিন্তু এখন ছাত্র আর রীতিমতো ক্লাসে নেই আছে রাজনৈতিক নেতার পেছনে। সে বুঝে গেছে ক্লাসে শিক্ষকের কথা শুনে আর তার কথা মতো চললে কোন ক্ষমতা কিংবা লাভ কোনটাই হবেনা তারচেয়ে বরং রাজনৈতিক নেতার পেছনে হাটলে ও তার কথা শুনলে ক্ষমতা এবং একসময়ে এসব শিক্ষক কিংবা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অর্থ্যাৎ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কিংবা সভাপতি হতে পারবে তবে ছাত্র কেন শিক্ষকৈর কথা শুনবে রাজনৈতিক নেতার কথা বাদ দিয়ে ! আর এ সব ছাত্রকে শিক্ষক কোন নীতি – নৈতিকতার কথা বলতে পারেনা , আদেশ দিতে পারেনা কোন কিছুর, জবাব চাইতে গেলেই তো আবার সেই রাজনৈতিক নেতার দৌড় পরিশেষে, শিক্ষককে অপমানিত আর লাঞ্চিত হওয়া ছাড়া আর কোন কিছুই করার থাকেনা।

শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পকঃ শিকক্ষক ও ছাত্র এদের মধ্যে সর্ম্পক কেমন হবে? এ বিষয়ে দুই ধরনের মত পাওয়া যায় একটি হলো শিক্ষক হবে পিতৃ কিংবা বড়ভাই তুল্য আর অন্যটি হলো বন্ধুত্বপৃর্ণ। প্রথমটি নব্বই দশকের কথা আর দ্বিতীয়টি হলো বিংশ শতাধ্বী তথা বর্তমান যুগের কথা। একটু বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে প্রথম ধারণাটির যুগে ছাত্র সমাজের সাথে শিক্ষকদের কোনো দ্বন্ধ¦ কিংবা কোন অমর্যাদাকর কোন কিছুই ঘটেনি এটা মোটামুটি সবাই জানা। কিন্তু বর্তমান এ যুগে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের নব্বই দশকের এই ধারনাকে ববরোচিত আখ্যাদিয়ে এটিকে তারা পরিবর্তন করতে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তারা সফলও হয় এ কারণে এখন কোন শিক্ষার্থী ও কোন শিক্ষক এখন আর পিতৃ কিংবা বড় ভ্রাতৃতুল্য নয়। সুতরাং এই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে শিক্ষকের উপর ছাত্রের হামলা, অশোভন আচরণ, প্রেম নিবেদন প্রভৃতি আবার শিক্ষকদের মধ্যে পরিমল প্রকৃতির শিক্ষক এখন সমাজে বেশ বি¯তৃত হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গস্খহণ এখন প্রায় সর্বজন স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। অথ্যাৎ, শিক্ষাথীর্ যে শিক্ষকে ভালবাসবে সে ভালো শিক্ষক আর যে শিক্ষককে ভালবাসবে না সে শিক্ষক ভালো না। এতে করে শিক্ষক কি ছাত্রদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারে?

টিউশনি কিংবা কোচিংঃ শিক্ষক অবহেলা কিংবা লাঞ্চনার অন্যতম এক কারণ হলো শিক্ষকের জীবন মান পরিচালনার জন্য টাকার পেছনে ঘুরে টিউশনি কিংবা কোচিংয়ে সময় দেওয়া। এতে করে একজন শিক্ষক কোন একজন কিংবা একদল শিক্ষাার্থীকে প্রাইভেটভাবে পড়ানো হয় । এত করে একজন শিক্ষক সাময়িকভাবে লাভবান হলেও মূলত তিনি পুরো শিক্ষক সমাজের মানকে অবনমিত করেছেন। সাময়িক লাভবান হওয়ার আশায় এ পদ্ধতিকে গস্খহণ করতে আগ্রহী উচ্চস্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং স্কুল, কলেজে পাঠদানকারী শিক্ষাক। ফলে এদের মধ্যে একধরনের সঙ্গাতময় মনোভাব তৈরী হয় অণ্যদিকে, শিক্ষথী,তাদের অভিভাবকরাও মনে করেন শ্রেণীকক্ষে তার সন্তান না গেলেও সে একই শিক্ষক কিংবা তার থেকে আরো ভালো মানের বা সমমানের শিক্ষককে দিয়ে প্রাইভেট কিংবা কোচিং করিয়ে নিবে তবে এসব শিক্ষককে সন্মান কিংবা সবার উর্দ্বে স্থান দিবে কেন? একবার যদি ভাবা যায় যে প্রাইভেট কিংবা কোচিং এবং না লিখেও পাশ দেওয়ার প্রবণতা না থাকতো এবং শিক্ষকের হাতে যদি রাষ্ট্রের একটু ক্ষমতা থাকতো তবে এসব অভিভাবক, শিক্ষার্থী কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতা এসব শিক্ষককে কিভাবে সন্মান করতো আর দেশে কিরুপ নৈতিকতা বিরাজ করতো?

পদোন্নতি না থাকাঃ আমাদের শিক্ষকের পদোন্নতি না থাকাটা শিক্ষক লাঞ্চনার অণ্যতম এক কারণ কেননা যে শিক্ষকের বয়স ৪৫ বছর তাকে যে রকম ৩ টি স্তরভেদে ৫ টি ক্লাস নিতে হয় ২২ বছরের এক টকবকে যুবক নতুন যোগদান করলেও একই পরিসমাণ ক্লাস নিতে হয় এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই তরূন শিক্ষকের দিকে একটু খেয়াল থাকে কেননা, তার রুপ, যৌবন, আধুনিক কথাবার্তা, সবই যেকোন শিক্ষার্থীকে আর্কষণ করে ফলে বৃদ্ধ শিক্ষকের ক্লাসে তারা মন বসেনা এবং অনেকসময় দেখা যায় ক্লাস নেওয়ে তরুন ও প্রবীন এইসব শিক্ষকের মধ্যে একধরনের দ্বন্ধ। পরিলক্ষিত হয় পরিশেষে, শিক্ষার্থীরা তরুণ শিক্ষকের সাথে সুর মিলায় অতএব, প্রবীন শিক্ষকরা লাঞ্চিত হওয়ার খোরাক জোগায়। তাছাড়া যদি এমপিওভুক্ত কলেজগুলোতে একটি বিষয়ের সহযোগী কিংবা পৃর্ণাঙগ অধ্যক্ষ নেওয়ার সুযোগ থাকতো তবে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো না।

বদলি হওয়ার সুযোগ না থাকাঃ সরকারী কলেজে বদলি হওয়ার সুযোগ থাকলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক এমনকি নতুন আত্মীকরণকৃত শিক্ষকরা বদলি হওয়ার সুযোগ পানানা ফলে এক জায়গায় দীর্ঘদিনন চাকুরী করার ফলে অনেক শিক্ষক তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব যুদ্ধে লিপ্ত হয় আমাদের গবেষণায় বাংলাদেশের ২০৫০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা চালিয়ৈ দেখা গিয়াছে মাত্র ২০ টি ছাড়া বাকী ২০২৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকদের মধ্যে আভ্যন্তরীন অসতোষ পরিলক্ষিত হয়েছে আর এ অসন্তোষের কারণ হিসেবে জানা গেছে হয় কলেজের কোন কাজে এক পক্ষকে না রাখা, দলীয় পরিচয় কিংবা গোড়ামী। সুতরাং বলা যায় যে, বদলী হওয়ার সুয়োগ না থাকাটা শিক্ষক শিক্ষকের মধ্যে অন্তকোন্দেলের মূল এবং তা একসময় শিক্ষার্তী এমনকি অভিভাবক, গ্রাম, সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ে ফলে শিক্ষককে সন্মান জানানোর চেয়ে এই পেশার লোকদের প্রতি ঘৃণাও জন্মায়।

শিক্ষক সুরক্ষা কোন আইন না থাকাঃ সরকার শিক্ষকদের সুরক্ষা আইন প্রণয়ন না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধ মামলা করার পথ উন্মুক্ত করেছে। আবার সরকার সরকারী চাকুরীজীবীদের জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করলেও এতে শিক্ষক সমাজকে বাদ দেওয়া হয়েছে । আর এরফলে প্রতিনিয়ত আমরা দেশের বিভিন্নস্থানে শিক্ষক নির্যাতন কিংবা হামলার খবর পত্র-পত্রিকায় ভেসে আসে। গত ৩০ শে অগাষ্ট -১৫ ইং তারিখে শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর হামলা ও নির্যাতনের চিত্র থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। দেশের সবর্ত্রই শিক্ষকদের উপর এধরনের নির্যাতন হরহামেশাই ঘটছে। আর এইসব নির্যাতনের চিত্র কখনো গণমাধ্যমের সাহায্যে আমরা জানতে পারি, আবার কোনটি আমরা জানতে পারিনা ,গণমাধ্যমে আসলে তা হয় আলোচিত বা সমালোচিত, আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলে তা হয় উক্ত শিক্ষকের কৃত কর্মের উপযুক্ত শাস্তি। আবার কোন কোনটি শিক্ষক নিজে চাকুরচি্যুত আর সন্মান হারানোর ভয়ে প্রকাশ করেননা কেননা শিক্ষক হওয়ায় সে খুবই অসহায়। আমাদের সমাজে শিক্ষকরা সমাজের মানুষের সহানুভুতি আর করুনার উপর চেয়ে থাকতে হয় এদের সামাজে বিশেষ কোন কতৃত্ব বা ক্ষমতা নেই । আবার কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করলেও তা শিক্ষকসুলভ আচরণ নয় বলে তাকে শোকোজ করে আবার কখনো বহিস্কার করার ঘটনাও ঘটে যা এখন নিত্যনতুন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করলে সমাজে এ পেশায় জড়িতরা আবার পুরনো মর্যাদা ফিরে পাবে বলে সকলের বিশ্বাস।

আমাদর বিশ্বাস সরকার এই মহান পেশায় নিয়োজিত লোকদের সন্মান ফিরিয়ে দিতে যাবতীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন ।

লেখক:  গবেষক ও কলাম লেখক,  প্রভাষক দর্শন বিভাগ, ফেনী সাউথ ইষ্ট ডিগ্রী কলেজ।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042550563812256