২০১৩ সালে মুসলিম সেলেকা অ্যালায়েন্সের হাতে দেশটির দীর্ঘ দিনের শাসক ফ্রাঁসোয়া বোজিজের উত্খাতের পর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর সেলেকাদের হটাতে ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপ করলেও দেশটিতে শান্তি আসেনি। এখন পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি লোক উদ্বাস্তু হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৫ লাখ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। গৃহযুদ্ধের কারণে মধ্য আফ্রিকার সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গত চার বছর ধরে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই গৃহযুদ্ধের কারণে সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কোমলমতি শিশুরা। বেশিরভাগ স্কুলেই নেই কোন শিক্ষক। শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা পড়েছে বিপাকে। প্রাণের ভয়ে পালানো ছাড়াও আরেকটি সমস্যা হলো এই শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তাই বিনা বেতনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র পড়ানোর বদলে বেশিরভাগ শিক্ষকই চলে গেছেন।
অবশ্য শিক্ষক সংকটের বিকল্প এক সমাধানও খুঁজে বের করেছেন স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা-মায়েরা। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস যাতে নষ্ট না হয় এবং এই সময়ে যাতে তারা খারাপ কোন কাজে ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য নিজেরাই স্কুলের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এদেরই একজন কৃষক আলিনায়ের জাওরো। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে তেমন কিছুই নেই। যা কিছু জ্ঞান রয়েছে তাও চাষাবাদ সম্পর্কে। রাজধানী থেকে ২৫ কিলোমিটার অদূরে ইয়াবোরো গ্রামের ঐ স্কুলের ১০৫ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়ান ৫৮ বছর বয়সী জাওরো। মাটির বুকে বীজ বোনার বদলে কোমলমতি শিশুদের তরুণ মনে জ্ঞানের বীজ বোপন করার কাজ করছেন তিনি।
জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২৩ লাখ মানুষের দেশ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের অর্ধেক মানুষই বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির ৮০ ভাগ অঞ্চলই এখন অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এসব গোষ্ঠী স্কুল দখল করে স্কুল ভবনকে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছে। স্কুলের মাঠকে ব্যবহার করছে ফায়ারিং রেঞ্জ হিসেবে আর ডেস্ক এবং চেয়ারকে কখনো কখনো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইয়ামবোরো গ্রামের লোকজনও অস্ত্রধারী জঙ্গি গোষ্ঠীর ভয়ে ভীত। যখন তারা আসে তখন স্থানীয়রা আশেপাশের জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে লুকান। জাওরো বলেন, জঙ্গলের মধ্যে বিষাক্ত সাপ থাকলেও কিছু করার থাকে না। আমাদের খাওয়ার মতোও তেমন কিছু থাকে না। আমরা সব সময়ই আতঙ্কের মধ্যে থাকি। জীবনের ভয় থাকলেও বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়াটা অব্যাহত রাখতে পেরে আমরা খুশি।-বিবিসি