সদ্যজাতীয়করন কৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় প্যানেল শিক্ষকরা দেশের উচ্চ অাদালত মহামান্য হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে থেকে প্রায় ৫৫০ টি মামলার রায়ের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা ও জটিলতার অবসান পায়।
বাংলাদশের বাস্তব প্রেক্ষাপটে কিছু কথা
বাংলাদেশের মত স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা অর্জন করাই কঠিন বিষয়। কারণটা হচ্ছে এসব দেশগুলোতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষজন বেশি থাকে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিবারের হাল ধরতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়। এরপরও উচ্চশিক্ষা করা থেমে থাকে না। চলতে থাকে। অনেক কষ্টে চলতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা মা ভিটে বাড়ি বিক্রি করেও সন্তানকে পড়ালেখা করান। অনার্স মাস্টার্স শেষ করান।
আমরা সবাই জানি, আমাদের মত দেশগুলিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করলেই চাকরি পাওয়া যাবে এরকম নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। অনার্স মাস্টার্স করে একটা ছেলে যদি বসে থাকে তাহলে এটা যে কত বড় অপমান তা বলে বুঝানো যাবে না। বাবা মা চাপ দিতে থাকেন। আত্মীয়-স্বজন কটূক্তি করতে থাকেন। চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। উপকথার মত ছড়াতে থাকে-মাস্টার্স পাস করে ঘোড়ার ঘাস কাটে। প্রতিবেশী বা আশেপাশে যারা থাকে তারা দেখা যায় স্বল্প বয়সে বিদেশে গিয়ে ভাল অর্থ রুজি করছে। আর্থিক সচ্ছলতা আসছে। ওরাও টিটকিরি করতে ছাড়ে না। এমতাবস্থায় বেশিরভাগ মাস্টার্সডিগ্রি ধারীদের কাছে মনে হয় মাস্টার্স পাস করে বিশাল বড় ভুল করে ফেলেছে। এই বেকার অবস্থায় কেউ অর্থ দিতে চায় না। বিয়ে দিতে চায় না।
পড়ালেখা কালীন জমি জমা বিক্রি করে অর্থ দিলেও বেকার মাস্টার্স পাস ধারীদের কেউ অর্থ দিতে চায় না।
বর্তমানে উপোরিউক্ত অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার কথা।
যেখানে হাজার হাজার বেকার ও প্রাথমিক স্কুলগুলোতে প্রায় অর্ধলক্ষ পদ খালি।
প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নিয়োগর সকল যোগ্যতা অর্জন সত্যেও নিয়োগে বিলম্ব।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ( সদ্যজাতীয়করন কৃত) প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য সরকার ২০১০ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ছাড়া মোট ৬১টি জেলায় ৯ ডিসেম্বর ২০১১ সালে একযোগে সারা দেশে ‘শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষা’ অনুষ্ঠিত হয়। ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার সময় ৮০ মিনিট। উত্তরদাতা প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশ করা হয়। মোট উত্তীর্ণ প্রার্থী ৪২ হাজার ৬১১ জন।
চূড়ান্ত ফলটি উপজেলাভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে, মেধা তালিকার সিরিয়াল অনুসারে নিয়োগ দেয়া হবে। ৪২ হাজার ৬১১ জন শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রথম দফায় ১৬ হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মেধা তালিকার সিরিয়াল ভঙ্গ করে নিয়োগ দেয়ার কারণে প্রথম দিক থেকেও অনেকেই নিয়োগ পাননি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতোই সদ্যজাতীয়করন কৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। কিন্তু পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৪২ হাজার প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পেলেন। বাকি ২৬ হাজার শিক্ষক আজো নিয়োগ না পেয়ে প্যানেলের শিক্ষকরা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তাই সংশি্লষ্ট সকলের কাছে বিনীত আবেদন অামাদের নিয়োগ দিয়ে ২৬ হাজার পরিবারকে বাঁচার সুযোগ দিন।
মেহদী মাসুদ : প্যানেল শিক্ষক, পটুয়াখালী জেলা।