নয় বছর বয়সে পরিচারিকা। বারোতে যৌনপল্লির কর্মী। তেরোয় হোমের বাসিন্দা। এবং একুশে আইন-কলেজে পড়ার প্রস্তুতি! সঙ্গীতা মণ্ডল একা নন। তাঁর মতো আরও অনেকের লড়াইকে স্বীকৃতি দিতেই জাস্টিস ফর স্কুল কর্মসূচি শুরু করেছে নেদারল্যান্ডসের ফ্রি আ গার্ল সংগঠন। কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সংলাপে’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েদের পুনর্বাসন এবং আইন-শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন মাস ধরে খোঁজখবর নিয়ে কুড়িজনের একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। এঁরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে, যাঁরা একসময় যৌনপল্লিতে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন এবং পুনর্বাসনের পর বহুদিন কেটে গেলেও আইনি বিচার পাননি।
জাস্টিস ফর স্কুলের মুম্বইয়ের অধিকর্তা ফ্রান্সিসের কথায়, দেশের সেরা ল-কলেজগুলির সঙ্গে মেয়েদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি আমরা। ভর্তি হওয়ার প্রশিক্ষণ ও আইন পড়ার যাবতীয় খরচ এই প্রকল্প থেকেই দেওয়া হবে। মুম্বই থেকে ফোনে সঙ্গীতা জানান, নয় বছর বয়সে তাঁকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজে দেন মা। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীই ভয় দেখিয়ে যৌননিগ্রহ করত। সেখান থেকে পালিয়ে তিনি দালালের খপ্পরে পড়েন। বিক্রি হয়ে যান যৌনপল্লিতে। পরে এক পুলিশি অভিযানে উদ্ধার হওয়ার পর তিনি যান পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
১২ বছরের বালিকা জানত, মা-বাবা তাকে ঘরে নেবে না। তাই পড়াশোনা শুরু। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বেহালার বিবেকানন্দ কলেজ থেকে স্নাতক। বর্তমানে আইন নিয়ে পড়ার প্রস্তুতি চলছে। সঙ্গীতার কথায়, আমার জীবনটা ভাবলে দেখবেন, লড়াইটা অনেকের বিরুদ্ধে। শিশুশ্রম, নারীপাচার, নারীঅধিকার, আমার ক্ষেত্রে সব অধিকারই লঙ্ঘিত হয়েছে। আইনজীবী হয়ে লড়াই জেতাই এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। সংলাপের কর্মকর্তা তপতী ভৌমিক বলেন, এই মেয়েরা কোর্টে লাইন দিয়ে প্র্যাকটিস করবে, এটা ভাবছি না! ওরা যাতে নিজেদের অধিকারটুকু অন্তত বুঝে নিতে পারে। এছাড়া, আরও অনেককে সাহায্য করতে পারবে ওরা। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েদের পুনর্বাসনে সেলাই মেশিন না বিলিয়ে আইনজীবী তৈরির কথা ভাবা হবে না কেন!