রস্ক প্রকল্পে দুর্নীতি চলছেই - দৈনিকশিক্ষা

রস্ক প্রকল্পে দুর্নীতি চলছেই

সাঈদ হোসেন/মেহেদী হাসান |

Taka-240সরকারি পরিচালিত ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ (রস্ক) প্রকল্পের  ৪৮০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে।

এছাড়া নানা অনিয়মের কারণে গত তিন মাসে ৫২টি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো শতাধিক স্কুল। বি সি এস প্রশাসন ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তার অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি।

এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারাও চান প্রকল্পটি বেঁেচ থাকুক। থাকলেই বিদেশ ভ্রমণ, দামী গাড়িতে চড়া, পরামর্শক হিসেবে বাড়তি টাকা পাওয়া ইত্যাদি। দুর্নীতি অনিয়মের তথ্য প্রমাণ দৈনিকশিক্ষার হাতে রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় উপ-কমিটির তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, যারা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেনি অর্থাৎ ঝড়ে পড়েছে, তাদের আনন্দের সঙ্গে স্কুলে পাঠদান করার জন্য ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম। বিশ্বব্যাংকের স্বল্পসুদের ঋণের টাকায় পরিচালিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নাম  ‘আনন্দ স্কুল’।

প্রকল্পের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসার কার্যক্রমে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, শিক্ষার মানোন্নয়নে ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার, প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ৭৭ লাখ ডলার ও এমঅ্যান্ডই বাস্তবায়নে ৫০ লাখ ডলার দেয়া হয়। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অনুমোদন দেয়। ২০১৭ সাল প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এ প্রকল্পের মেয়াদে পুরো টাকা ব্যয় হবে না। ফলে ৫ থেকে ৬ কোটি মার্কিন ডলার অব্যয়িত থাকবে। প্রকল্পের মেয়াদে টাকা ব্যয় না হওয়ায় এ টাকা ফেরত যাবে। রস্ক প্রকল্পের মধ্যম মেয়াদি ও ডিপিপি সংশোধনসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে অর্থ ফেরতের বিষয়টি উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত গেলে দাতাসংস্থার নেতিবাচক ধারণা হবে। এ নেতিবাচক ধারণা কাটাতে প্রকল্পের ধরন পরিবর্তন করে টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চল, হাওর, চর অঞ্চল, চা বাগান, উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত চিন্তাভাবনা চলছে। পাশাপাশি যেখানে বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু ও ঝরে পড়ার হার বেশি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না ওই সব এলাকাও যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রকল্পের অর্থায়নে পরিচালিত স্কুলগুলোর শিক্ষকদের বেতন ও ইনসেনটিভ বৃদ্ধি, প্রকল্প পরিচালনার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ ব্যয় কতটুকু গুণগত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় ৪৯ জেলায় ১২৫টি উপজেলায় ১১ হাজার ১৬২টি স্কুলে পাঠদান করছে ৩১ লাখ ৯ হাজার ৮৭ জন শিক্ষার্থী। প্রকল্পের নীতিমালায় বলা আছে, ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরে পড়া শিশুরা আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে। একটি স্কুলে কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থী ওপরে ৩৫ জন পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে। কোনো সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে এমন কোনো শিক্ষার্থী আনন্দ স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।  কিন্তু এসব নিয়ম নীতি না মানার অভিযোগ রয়েছে অনেক স্কুলের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জালিয়াতির কারণে প্রকল্পের স্কুলগুলোয়  মুখ থুবড়ে পড়েছে। নানা অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছে না।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই স্কুল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ঝরে পড়া কমানোর জন্য নির্মিত এসব স্কুল আদৌ ঝরে পড়া কমাচ্ছে কি-না তা দেখার বিষয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প শুরুর আগেই শিক্ষার্থী বাছাই, শিক্ষক নিয়োগ ও জরিপে বড় ধরনের অনিয়ম করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কোনোমতে স্কুল স্থাপন করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। স্কুল শুরু করার আগে উপজেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী খুঁজে বের করতে জরিপ পরিচালনা করার নামেই লুটপাটে নেমে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। নামসর্বস্ব ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান, সরকারি স্কুলে পড়ার শিক্ষার্থীদের নাম আনন্দ স্কুলে ঢুকানো, ৮ বছরের নিচে বয়স, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীকে দিয়ে পাঠদান, উপবৃত্তি লুটপাটসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন অনেক স্কুলের সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, অনেক স্কুলে সাইনবোর্ড আছে শিক্ষার্থী নাই, স্কুল বন্ধ কিন্তু শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি-উপকরণ তোলা হচ্ছে নিয়মিত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রস্ক প্রকল্প পরিচালক ড. এম মিজানুর রহমান বলেন, এখনও এগুলো নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্প উন্নয়নসংক্রান্ত সংশোধন (আরডিপিপি) হলে বোঝা যাবে কোন খাতে কত টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। আদৌ কোনো টাকা ফেরত যাবে কিনা বা আরো টাকার প্রয়োজন হবে কিনা।

প্রকল্পের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এখন কড়া অবস্থানে আছি। কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে স্কুল বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারি অর্থের কোনো অপচয় যাতে না হয় সে ব্যাপারে শতভাগ সতর্ক অবস্থানে আছি।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012563943862915