‘শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছেনা’-এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুক, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, আইপড, ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। শনিবার অভিভাবকদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ নাজনীন বেগম এমন নির্দেশনা দিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাল ফলাফল পেতে চাইলে আগামী ছয় মাস তাদেরকে অবশ্যই এসব প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ ফেসবুক ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা থেকে মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। এতে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারছে না।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ এইচএসসি পরীক্ষায় এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ জন পরীক্ষার্থী ফেল করে। ১৩৭০ জনের মধ্যে পাস করে ১৩৬২ জন। এই কারণে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় যাতে শতভাগ পাসের হার হয় সেজন্য অভিভাবকদের নিয়ে এই বৈঠক হয়েছে। এবং সেই বৈঠকে ফেসবুক বন্ধের কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী আয়োজিত এই বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ নাজনীন বেগম অভিভাবকদের বলেন, ফেসবুক শিক্ষার্থীদের মাথা নষ্ট করছে। স্কুলে ফেসবুক বন্ধ। বাসায়ও বন্ধ করতে হবে। শুধু ফেসবুক বন্ধ করলে চলবে না, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সব বন্ধ করতে হবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে কাজী তোফায়েল আহমেদ নামের একজন অভিভাবক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেন, ‘বড় ছেলে ইতকান উত্তরা রাজউক কলেজ থেকে এসএসসি দেবে। আজ (শনিবার) অভিভাবক-শিক্ষক মিটিং হল। ভাইস প্রিন্সিপাল বললেন, আজ থেকে বাসায় ফেসবুক, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, আইপট, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে হবে। আপনি কি একমত???’ জানতে চাইলে কাজী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষ মনে করেন এগুলো পড়ালেখার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এজন্য এসব বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, দরজা-জানালা খুলে দিলে ধূলো-বালির সঙ্গে মুক্ত বাতাসও আসে। এখন ধূলো-বালির ভয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলে-তো মুক্ত বাতাসও আসবে না। যেখানে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো হচ্ছে সেখানে পরীক্ষাকে সামনে রেখে তথ্য প্রযুক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখার মূল কারণই তিনি বুঝতে পারছেন না বলে জানান।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বিষয়টিকে স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করে বলেছেন, কী কারণে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা আমি জানি না। তবে আমার মনে হয়, একাডেমিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আর এতে শিক্ষার্থীদের মঙ্গলই হবে।
এরআগে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে সর্বশেষ ২৩শে মার্চ মতামত জানতে চাওয়া হয় যে, মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ছ’ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কিনা। শিশু, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এ মতামত চাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা রাত জেগে ফেসবুক ব্যবহার করলে পড়াশুনা এবং স্বাস্থ্য দু’টোরই ক্ষতি হয়। এর জবাবে বিটিআরসি জানায়, শুধুমাত্র শিশুদের জন্য আংশিকভাবে ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ ফেসবুক শুধু শিশুরা ব্যবহার করে না। তাদের বাবা-মাও ব্যবহার করেন। তবে বিটিআরসি শিশুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কিছু সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ এবং পাসওয়ার্ড বাবা-মা অথবা অভিভাকদের হাতে রাখা। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে পর্যন্ত ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট খুলতে না দেওয়া। শিশুদের তদারকির মধ্যে রাখতে হবে। আর এর জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের।