রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। পাঁচ ধরনের পদে ৩৩১ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ২৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশী নাগরিকদের এই নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়তে যারা আগ্রহী তারা যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আবেদন করতে পারেন এসব পদে।
কোন পদে কতজন : কম্পিউটার অপারেটর পদে ২৯ জন, সুপারভাইজার পদে ১১৪, ক্যাশিয়ার পদে ১৩২, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে ৫৪ জন এবং ড্রাইভার পদে দুজনকে নিয়োগ দেয়া হবে। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ দুটি পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যোগ্যতা : কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদনের যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণী/সমমানের সিজিপিএ-তে স্নাতক/সমমান। অভিজ্ঞতা : কম্পিউটার বিষয়ে ১ বছরের ডিপ্লোমাসহ ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সুপারভাইজার পদে আবেদনের যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণী/সমমানের সিজিপিএ-তে স্নাতক/সমমান ডিগ্রি। ক্যাশিয়ার পদে আবেদনের যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণী/সমমানের সিজিপিএ-তে স্নাতক/সমমান ডিগ্রি। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে আবেদনের শিক্ষাগত যোগ্যতা : দ্বিতীয় শ্রেণী/সমমানের সিজিপিএ-তে স্নাতক/সমমান ডিগ্রি। সেই সঙ্গে কম্পিউটার বিষয়ে ১ বছরের ডিপ্লোমাসহ ১ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ড্রাইভার পদে আবেদনের শিক্ষাগত যোগ্যতা : এসএসসি/সমমান ডিগ্রি। সঙ্গে থাকতে হবে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ৩ বছরের অভিজ্ঞতা। শুধু কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য সব জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য পদে আবেদনের জন্য কেবল বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত জেলার প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
বয়স : প্রার্থীর বয়স ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
বেতন : চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী বেতন দেয়া হবে। কম্পিউটার অপারেটর পদে বেতন : ১২,৫০০ থেকে ৩০,২৩০ টাকা স্কেলে, সুপারভাইজার পদে ১১০০০ টাকা থেকে ২৬৫৯০ টাকা স্কেলে, ক্যাশিয়ার পদে বেতন : ১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে বেতন : ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা এবং ড্রাইভার পদে ৯,৩০০ টাকা থেকে ২২,৪৯০ টাকা স্কেলে বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি দেয়া হবে। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ দুটি পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ডেটলাইন : ইতিমধ্যে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগ্রহীরা আগামী ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
বাছাই : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এসব পদে এমসিকিউ, লিখিত, মৌখিক ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে লোকবল চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হবে। এসব পরীক্ষার তারিখ ও স্থান পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে জানানো হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া : আগ্রহী প্রার্থীরা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (www.rakub.org.bd) ঢুকে একটি লিংক পাওয়া যাবে। ওই লিংকে প্রবেশ করে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় একাডেমিক ও ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণের পর নির্দিষ্ট মাপের ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে। ফরম পূরণের পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে। অ্যাপ্লিকেন্ট কপি রেখে দিলে পরবর্তীতেও প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার আগে লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ফটোকপি, গেজেটেড কর্মকর্তার সত্যায়িত সব সার্টিফিকেটের ফটোকপি, সম্প্রতি তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দেয়া জাতীয়তা সনদ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখাতে হবে। বিস্তারিত জানতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি দেখুন।
বাড়তি যোগ্যতা : ব্যাংকার হওয়ার জন্য একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি যোগ্যতাও থাকা চাই। ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটাদাগে আবেদনকারীর বিষয়গত জ্ঞান কতটা গভীর তা যাচাই করা হয়ে থাকে। তার ফাংশনাল নলেজ খতিয়ে দেয়া হয়। ভাইভাতে প্রার্থীর জড়তা ও প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেগেটিভ মার্কিং করা হয়। এজন্য তার বাচনভঙ্গিও স্মার্ট হওয়া জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকা চাই অটুট। এছাড়া প্রার্থীর কমিউনিকেশন স্কিল, ইংরেজি দক্ষতা, কম্পিউটারে পারদর্শিতা, সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব গুণাগুণ, দায়িত্ববোধ, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা সর্বোপরি সত্যিই তিনি কাজটির জন্য উপযুক্ত কি না সে বিষয়গুলো যাচাই শেষেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রার্থীকে কোন বিষয়গুলোতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত এ বিষয়ে জানতে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন ব্যাংকারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, ব্যাংকসহ অন্যান্য যে কোনো চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের সাবজেক্টটিভ নলেজ কতটা আছে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। তাই যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীকেই তার বিষয়গত জ্ঞানের গভীরতা অর্জন করতে হবে। প্রার্থীকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও দেশীয় অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই অর্থনৈতিক সূচক, অর্থনৈতিক সমীক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। প্রার্থীর কিছুটা হলেও ব্যাংকিং জ্ঞান থাকা চাই। এছাড়া সাধারণ জ্ঞান বিশেষ করে সাম্প্রতিক ও সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো থেকেও ভাইভাতে প্রশ্ন হয়ে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত এ ধরনের প্রশ্নও করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অর্থনীতি সম্পর্কে তার ধারণা-ভাবনা বিচারে নেয়া হয়। নিয়োগ পেলে কীভাবে কাজ করবেন, কেন ব্যাংকে চাকরি করতে চান- এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই ভাইভার আগে এসব বিষয়ে প্রার্থীকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।
পরীক্ষা প্রস্তুতি : কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তা আসিফ জাকারিয়া প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ক্যাশিয়ার পদের বহু নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা অংশে ব্যাকরণ এবং সাহিত্য থেকে প্রশ্ন করা হয়। সাহিত্যে কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্যকর্ম, বিভিন্ন কবিতার চরণ, উপন্যাস বা গল্পের চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ব্যাকরণ অংশে আসে বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, সন্ধিবিচ্ছেদ, সমাস, শব্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, সমার্থক, বিপরীতার্থক ও পারিভাষিক শব্দ। লিখিত পরীক্ষায় থাকে অনুবাদ, সাম্প্রতিক বা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে রচনা বা অনুচ্ছেদ লিখন।
একই ব্যাংকের কর্মকর্তা নিশাত নূর জানান, ইংরেজি বিষয়ে Fill in the blanks, Synoûm, antoûm, phrases and idioms, Tense, Correct Spelling, Sentence Correction, Analog থেকে প্রশ্ন আসে এমসিকিউ অংশে। একটি বিভাগ থেকে কয়েকটি করে প্রশ্ন থাকতে পারে। সমসাময়িক ইস্যুতে যাদের জানাশোনা ভালো তারা লিখিত পরীক্ষায় রচনায় ভালো করেন। ইংরেজি সাহিত্য অংশে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম, কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম তারিখ, জীবনী, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র ও বিশেষ উক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আর লিখিত অংশে ব্যাকরণ, পত্র, অনুবাদ ও রচনা লিখন বিষয়ে জোর দিতে ভুলবেন না।
সোনালী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সৌমিত্র সাহা বলেন, যে অংক ভালো পারে, ব্যাংক চাকরি তার জন্য। নিয়োগ পরীক্ষায় সে অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকে। তিনি জানান, যে কোনো ব্যাংকের পরীক্ষায় ভালো করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই আয়ত্তে থাকতে হবে। এমসিকিউ অংশে সহজে উত্তর করার জন্য শর্টকাট টেকনিক ব্যবহার করে নিয়মিত চর্চা করতে হবে। বিশেষ করে ঐকিক নিয়ম, শতকরা, পরিমাপ ও একক, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি ও পরিমিতি বিষয়ে। তাই আপনাকে এ-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে। এছাড়া লসাগু-গসাগু, বর্গ, সরল, মান নির্ণয় ও জ্যামিতিক সূত্র ও সংজ্ঞা তো আছেই।
সহায়ক বইপত্র : জনতা ব্যাংকে গত বছর নিয়োগ পাওয়া এক্সিকিউটিভ অফিসার নাহিদা সুলতানা বলেন, বিসিএসের প্রস্তুতি সহায়ক বই ব্যাংকের পরীক্ষায় অনেক কাজে আসবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনীর ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট গাইড দেখতে পারেন। আইবিএ-এমবিএ ভর্তি গাইড, জিম্যাট অফিশিয়াল গণিত ও ইংরেজি উভয় বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য দেখতে পারেন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য মাসিক তথ্যভিত্তিক পত্রিকা, তথ্যপ্রযুক্তির জন্য এইচএসসি পর্যায়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বই বেশ সহায়ক হবে।