শিক্ষার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুছছেন, আর স্লোগান দিচ্ছেন-‘রিশা হত্যার বিচার চাই।’একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু তাদের সবাইকে হতবিহ্বল করেছে। বখাটের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম সুরাইয়া আক্তার রিশা এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতেও পারেননি তার সহপাঠীরা। তাই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রিশার মৃত্যুর খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কান্না আর ক্ষোভ একাকার হয়েছে। সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেওয়ার সময় তাই অনেকেই কান্না থামাতে পারেননি!
রিশার মৃত্যুর খবরে কাকরাইলের রাজপথে মুহূর্তেই অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। কান্নায় কণ্ঠ অবরুদ্ধ হলেও স্লোগান উঠে-‘রিশার খুনির বিচার চাই, রিশার খুনিকে গ্রেফতার করো, বিচার করো।’-ইত্যাদি।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের শিক্ষার্থী রাইশা মাহিনূর বলেন, আমাদের বন্ধু রিশাকে যে ছুরি মেরেছে তাকে গ্রেফতার করতে হবে অবিলম্বে। বখাটে ওবায়দুল খানের শাস্তি চাই।
এদিকে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যায় পুলিশ প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবাইদুলকে গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলন করবে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন একাদশ শ্রেণির ২য় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মুনতাসির মাহমুদ রিফাত।
কাকরাইলের স্কুলটির সামনের রাস্তায় অবরোধ শেষে এ ঘোষণা দেয় সে।
মুনতাসির মাহমুদ রিফাত বলে, কাকরাইলের মতো এমন একটি জায়গায় প্রকাশ্যে এমন হত্যা কীভাবে সম্ভব। অভিযুক্ত বৈশাখী টেইলার্সের ওবাইদুলকে আটক না করলে আমারা আগামীকাল থেকে কঠোর আন্দোলানে যাব। আজ দুপুর ১২টা থেকে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রশাসনকে আসামি ধরার আল্টিমেটাম দেওয়া হলো।
রিশার সহপাঠী ইশতিয়াক তোহা আহমেদ বলে, মা-বোন আমাদেরও আছে। দিনদুপুরে এমন জনবহুল এলাকায় হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই আমরা।’
রিশা হত্যার প্রতিবাদের স্কুলটির শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড় সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। এতে ওই এলাকা ও এর আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিশিউর রহমান বলেন, ‘উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা দেড় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূটি করে। অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
দু’দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ
এদিকে বাংলা মিডিয়ামের ডে শিফটের স্কুল বিভাগের ইংরেজি শিক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী, আমাদের সন্তান রিশাকে হত্যা করায় আমরা খুবই শোকাহত। অভিযুক্ত যেই হোক না কেনো আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। শুধু আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী নয়, সারা বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর যেন এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়।’
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে স্কুলের বাইরে, যখন শিক্ষার্থীরা চলে যায় তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে পুলিশ। আমাদের স্কুল প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নিয়ম কানুন মেনে পরবর্তীতে আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করব যেন হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া আগামীকাল শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। আজ এবং আগামীকাল হত্যাকাণ্ডের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
৫ দিন আগে কাকরাইলে ‘বখাটে ’ যুবক ওবায়দুল খানের ছুরিকাঘাতে আহত হন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা (১৪)। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া রিশার মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, রিশা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের উপরে রিশার পেট ও হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় ওই যুবক। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। জানা গেছে, রিশার বাবা মো. রমজান আলী ক্যাবল ব্যবসায়ী, তারা রাজধানীর বংশালে সপরিবারে বসবাস করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় এবং পেনাল কোডে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে ওবায়দুল খানকে (২৯) মামলায় আসামি করা হয়। ওবায়দুল খান এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস আগে মায়ের সঙ্গে ইস্টার্ন মল্লিকার শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সে যান সুরাইয়া আক্তার রিশা। ওই টেইলার্সে তার পোশাক সেলাই করতে দেন। পরে দোকানের রিসিটে বাসার ঠিকানা ও তার মায়ের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়। ওই রিসিট থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে ওবায়দুল খান রিশাকে প্রায়ই ফোনে উত্ত্যক্ত করত। এতে একসময় বিরক্ত হয়ে মোবাইলফোনের সিমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর রিশার স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ওবায়দুল তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ওবায়দুলের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় রিশাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়।
পুলিশ পরে ওই টেইলার্সে গিয়ে জানতে পারে, দুই মাস আগে ওবায়দুল খান চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।