রাজধানীর ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার প্রথম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে আর অন্য শ্রেণিগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এসব আসন পূরণ করা হবে। প্রথম শ্রেণিতে দেড় হাজার আসনে ভর্তির জন্য ভাগ্য পরীক্ষা বা লটারিতে অংশ নিচ্ছে প্রায় ২২ হাজার শিশু। আর দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার শূন্য আসনে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে লটারি ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে লড়ছে ৭ জন ভর্তিচ্ছু। এই বাস্তবতাতেই গতকাল শনিবার রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ১৩টিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ ও কাল পর্যায়ক্রমে বাকি স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এসব স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে লটারি অনুষ্ঠিত হবে ২৪ ডিসেম্বর। তবে দেশের বিভিন্ন নাম করা বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ইতিমধ্যে লটারির আয়োজন শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন পড়েছে অর্ধলাখেরও বেশি। অথচ স্কুলগুলোতে আসন ফাঁকা আছে তিন হাজার ৬১৮টি। অর্থাত্ সেখানে প্রতি আসনের বিপরীতে লটারি ও ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে প্রায় ১৪ জন শিক্ষার্থী। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে (যেখানে প্রথম থেকে ন্যূনতম দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে) বিভিন্ন শ্রেণীতে শুন্য আসন ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অনুপাত কমবেশি একই রকম।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের ৩১৬টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে এবার প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৬৭ হাজার শূন্য আসনের বিপরীতে লটারি ও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে ৩ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী। বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়বে ২ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাত্ তারা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।
আলমগীর নামে এক অভিভাবক বলেন, তার সন্তান একটি কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তো। সেখানে ভালো লেখাপড়া হয় না। ২০টির মতো বই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকে রেহাই পেতে সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে কম আসন থাকায় প্রতিযোগিতায় তার সন্তান টিকতে পারবে কিনা এ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
রাজধানীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাড়ে ৩শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এসব স্কুলে ভর্তিতে কারো আগ্রহ নেই।
গতকাল রাজধানীর ‘ক’ গ্রুপের ১৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০ টায়। শীতের সকালে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে যায় শিশু শিক্ষার্থীরা।
আমেনা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘রাজধানীর প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি স্কুল খুব কম। তবু আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ভরসার জায়গা এটি। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতেও রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’
আজিজুল ইসলাম নামে এক অভিভাবকের বক্তব্য, সরকার পর্যাপ্ত ভালো স্কুল তৈরি করতে পারেনি। এটাই আমাদের কষ্টের কারণ। আর বছরের শুরুতেই আমাদের উদ্বেগ সন্তানকে কোন ভালো স্কুলে ভর্তি করানো।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইনসান আলী বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৮৫ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। প্রথম শ্রেণীতে ৬০ টি আসন রয়েছে যা লটারির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। অথচ আবেদনকারী অনেক। ফলে প্রতিযোগিতা হবেই।
রাজধানীর ‘ক’ গ্রুপের ১৩ টি স্কুলের ২য় থেকে ৫ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা গতকাল সকাল ১০টায় এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হয়। ‘খ’ গ্রুপের ১৩ টি স্কুলের ২য় থেকে ৫ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা আজ রবিবার সকাল ১০টায় এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। ‘গ’ গ্রুপের ১২ টি স্কুলের ২য় থেকে ৫ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা কাল সকাল ১০টায় এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম শ্রেণীতে লটারি ছাড়াও জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণীতেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৫ ও গণিতে ২০ নম্বর করে মোট ৫০ নম্বরের এক ঘণ্টার এবং অন্যান্য শ্রেণিতে বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩০ ও গণিতে ৪০ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।