বাংলাদেশী সংগঠন ব্র্যাক-লাইবেরিয়া সপ্তাহব্যাপী আগাম শৈশব উন্নয়ন বা আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) শীর্ষক একটি কর্মশিবির সম্পন্ন করেছে। বং কাউন্টির বাঙ্গাসিটিতে অবস্থিত সেন্টমার্টিন ক্যাথলিক পেস্টোরাল সেন্টারে গত ২৩-২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ কর্মশিবিরে ১০০ জন শিক্ষক এবং ১০ জন ”কেয়ারগিভার” বা সেবাদানকারী অংশ নেন।
এই কর্মসূচির প্রজেক্ট ম্যানেজার বেনেডিক্ট সেকে বলেছেন, তাঁর সংগঠনটি এই ইসিডি প্রকল্প ইউনিসেফের অধীনে বাস্তবায়িত করছে। এর লক্ষ্য হল, লাইবেরিয়ার বং, গ্র্যান্ড বাসা এবং গ্র্যান্ড গেদে কাউন্টিতে ইসিডির ক্ষেত্রে নতুন ইন্টারভেনশন অ্যাপ্রোচ পরীক্ষা করে দেখা।
মি. সেকে বলেছেন, ব্র্যাক একটি উন্নয়ন সংস্থা। যে সংস্থাটি দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে দরিদ্রের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে উৎসর্গীত। ব্র্যাক চায়, যাতে দরিদ্র্র ব্যক্তিদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। এবং তা তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনে।
মি. সেকে আরো বলেছেন, সুতরাং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আর্থিক এবং প্রতিষ্ঠানবিষয়ক উন্নয়ন। মানবাধিকার ও লিগ্যাল এইড, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন এবং দুযোর্গ মোকাবেলার মতো ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক সেবার যোগান দেওয়া।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ব্র্যাক-লাইবেরিয়া ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং পশুপালন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে লাইবেরিয়ার ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪ শ ৯০ জন অতি দরিদ্রের মধ্যে পৌঁছতে সফল হয়েছে।
মি. সেকে বলেন, ব্র্যাক-লাইবেরিয়া উল্লিখিত কাউন্টিগুলোতে কমিউনিটি ভিত্তিক ইসিডি সেন্টার চালু করবে। ওই কেন্দ্রগুলো তখন তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের তালিকা তৈরি এবং তাঁদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করবে। তিনি স্পষ্ট করেন যে, এটাই হলো তাঁদের নতুন পদ্ধতি। এসব বাচ্চাদের কাছে পৌঁছাতে বর্তমানে তারা তাঁদের যে ইসিডি কৌশল, সেটা থেকে বেরিয়ে তাঁরা এখন এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাইছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ব্র্যাক-লাইবেরিয়া প্রতিটি কাউন্টির দশটি কমিউনিটির মধ্যে কাজ করবে। প্রতিটি কমিউনিটির টার্গেট থাকবে ৩ শ বাচ্চা সংগ্রহ করা। আর এভাবে বাচ্চাদের বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় কাউন্টি এডুকেশন অফিসার এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিউনিটির বাসিন্দারাও থাকবেন।
তিনি বলেন, এভাবে চলতি পাইলট প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে ইসিডিতে শিশুদের পিতা-মাতার সম্পৃক্ততা যুক্ত করা সম্ভব হবে। প্রথম পর্যায়ের পাঠদান শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ের পাঠদান প্রক্রিয়ায় কমিউনিটির স্টেক হোল্ডারদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। আর তখন নতুন পাঠ পদ্ধতিরও উন্নয়ন গতিশীল হবে।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে একই ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মশিবির গ্রান্ড বাসা কাউন্টিতে শেষ হয়েছে। এবং গ্রান্ড গেদে কাউন্টিতে আরেকটি কর্মশিবির শুরু হয়েছে।
ইসিডি ব্র্যাক-লাইবেরিয়ার প্রকল্প ম্যানেজার আরো তথ্য প্রকাশ করেছেন যে, ওই তিনটি কাউন্টির নির্ধারিত কমিউনিটিগুলোতে শিশুদের মধ্যে তারা বই, পেন্সিল এবং অন্যান্য স্কুল সামগ্রী বণ্টন শেষ করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব আরলি চাইল্ড ডেভেলপমেন্টের মন্ত্রী মিসেস ফ্লোরেন্স এলেন জোন্স এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করার জন্য ব্র্যাক-লাইবেরিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ম্যাডাম জোন্স বলেছেন, নিকট অতীতেও এটা একটা সাধারণ প্রবণতা ছিল যে, ৬ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে স্কুলে যেত। এখন আর সেটা দেখা যায় না। এজন্য তিনি ব্র্যাক-লাইবেরিয়া এবং ইউনিসেফের নেওয়া যৌথ উদ্যোগ এবং এই কাজে অর্থ সংস্থানের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কর্মশিবিরে অংশগ্রহণকারীরাও ব্রাক, ইউনিসেফ ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
৩১ জানুয়ারির লাইবেরিয়া অবজারভারের সৌজন্যে।