লালফিতায় আটকে গেছে ৮০ সেসডিপ স্কুলের এমপিওভুক্তি - দৈনিকশিক্ষা

লালফিতায় আটকে গেছে ৮০ সেসডিপ স্কুলের এমপিওভুক্তি

বদরুল আলম শাওন |

অঢেল সমস্যায় নিমজ্জিত সারাদেশে ৮০টি এসইএসডিপি বা সেসডিপ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে গত বছর। তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একজন সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষামন্ত্রীও অনুমোদন দেন। এডিবির সঙ্গে করা সরকারের চুক্তি অনুযায়ী এ স্কুলগুলো এমপিওভুক্তি করা উচিত। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পর প্রায় এক বছর পার হলেও অঢেল সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্কুলগুলো। এসব স্কুলের প্রতিটিতে ১০ জন করে মোট ৮০০ শিক্ষক থাকার কথা; কিন্তু শিক্ষক আছেন ৪৮০ জন।

এডিবির লোনের টাকায় চলা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে’র (এসইএসডিপি) আওতায় এ ৮০টি বিদ্যালয় চলছে। জানতে চাইলে এ প্রোগ্রামের পরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন,  বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা চান এমপিওভুক্তি। নইলে তারা ভরসা পাচ্ছেন না।  জনবল সংকটের সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে’

প্রকল্পের উপ-পরিচালক শিপন কুমার দাশ বলেন, শিক্ষা সচিবের সভাপতিত্বে  এ কর্মসূচির জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয়, শিক্ষকদের বিস্তারিত তথ্যসহ পূর্ণাঙ্গ একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৫ মাস আগে জমা দেওয়া হয়েছে। হয়তো একটু সময় লাগছে। শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হলে শূন্য পদও নিমেষেই পূরণ করা যাবে।

এসব স্কুলের শিক্ষকরা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, ৮০টি বিদ্যালয়ের পাবলিক পরীক্ষার ফলও আশানুরূপ নয়। শিক্ষকরা শুধু আসেন আর যান। পাঠদানের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষকদের পদশূন্যতার কারণে প্রকল্পের টাকাও অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

জানা যায়, শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে পাবনা ও নেত্রকোনার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। নোয়াখালীর চরমজিদ এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকই নেই। প্রধান শিক্ষকবিহীন এমনিভাবে আরও চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদরো এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বান্দরবানের গোয়ালিখোলা এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (এখানে সহকারী প্রধান শিক্ষকও নেই), খাগড়াছড়ির চংড়াছড়ি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (এখানেও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই), পটুয়াখালীর চরগঙ্গা আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিদ্যালয়। আর সহকারী শিক্ষকদের পদশূন্যতা কমবেশি প্রতিটি বিদ্যালয়েই।

দেখা গেছে, উন্নত অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রকল্প থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়ার পরও বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা সবটুকু দক্ষতা দিয়ে পড়াচ্ছেন না। তারা চাইছেন এমপিওভুক্তি। জাতীয় বেতন স্কেলে এই কর্মসূচি থেকে মাসিক বেতন সহায়তা দেওয়া হলেও সরকারি এমপিও না থাকায় কিংবা প্রোগ্রাম শেষে এমপিওভুক্তির বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের। এ ছাড়া প্রকল্প শেষে কী হবে? এমন আশঙ্কায় অনেকে এসব বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এসইএসডিপি কর্তৃক এ খাতে বরাদ্দের অর্থ দিয়েই ৮০টি বিদ্যালয়কে একযোগে এমপিওভুক্তি করা সম্ভব। কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে এ প্রকল্পের প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন চলছে দ্বিতীয় দফার কাজ। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে প্রকল্প থেকে বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প থেকে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রোগ্রাম থেকেই বেতন সহায়তা দেওয়া হবে। শিক্ষকদের আশঙ্কা, এর পর কী হবে?

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ‘দুর্গম চরে’র বিদ্যালয় চরবসু এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এসইএসডিপি থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

 বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় জেএসসি ও এসএসসিতে প্রতিবারই ভালো ফল করছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্লাসে নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। দুর্গম চরাঞ্চল হলেও নদীভাঙা মানুষদের নতুন বসতি গড়ে উঠছে বিদ্যালয় এলাকায়। প্রতি বছরই প্রায় একশ’ করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিতে। কিন্তু বিদ্যালয়ের এমপিও না থাকায় শিক্ষক সংকট দূর করা যাচ্ছে না। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদসহ ৬টি শিক্ষক পদ শূন্য। ইনডেক্সধারী কিংবা নিবন্ধনধারী কোনো শিক্ষক ‘অনিশ্চিত’ চাকরিতে আসতে চান না। একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও চাকরি প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। একই চিত্র লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআফজল এসইএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক নয়ন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এমপিওভুক্তি না থাকায় বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক ও কর্মচারী সংকটে মানসম্মত পাঠদানসহ শিখন কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

নোয়াখালীর চরমজিদ এসইএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র মজুমদার জানান, বেসরকারি শিক্ষকদের মতো এমপিও সমপরিমাণ বেতন সহায়তা প্রকল্প থেকেই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারি এমপিওভুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাই তারা তাদের অভিজ্ঞতাসহ চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছেন।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054390430450439