শরীরের ওজনের সমপরিমান মেধাবৃত্তি কতটা শোভনীয়? - দৈনিকশিক্ষা

শরীরের ওজনের সমপরিমান মেধাবৃত্তি কতটা শোভনীয়?

মো. রহমত উল্লাহ্‌ |

RAHAMATULLA

দৈনিকশিক্ষাডটকমে গত ১৪ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম এরকম ‘শরীরের ওজনের সমপরিমান টাকা বৃত্তি’। প্রতিবেদনে জানা যায়, দুই শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ঝালকাঠি জেলায় সর্বোচ্চ ফল অর্জন করায় শরীরের ওজনের সমপরিমাণ টাকা বৃত্তি দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ডাব্লিউ ডাব্লিউ ফাউন্ডেশন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নলছিটি উপজেলার মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২০১৩ সালে মাইনুল হাসান ও ২০১৪ সালে মো. মাসরুর হাসান তমাল ঝালকাঠি জেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।আয়োজক সংস্থা পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা দিয়ে তাদের শরীরের ওজন নির্ণয় করে। এতে মাইনুল হাসান ৫৮ কেজি ওজনে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং মাসরুর ইসলাম তমাল ৭৮ কেজি ওজনে ৪৯ হাজার টাকার চেক পান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ঝালকাঠির সন্তান। এ জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় যে সবচেয়ে ভালো ফল করবে, তার শরীরের ওজন নির্ণয় করে সমপরিমাণে টাকা দেওয়া হবে।’

আমাদের সমাজের কিছু বিত্তবান ব্যক্তি যুগে যুগে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। কেউ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করেছেন। কেউ বই কিনে দিয়েছেন। কেউ সেচ্ছায় পাঠদান করছেন। এই যে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বড় বড় স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এগুলোর প্রতিষ্ঠাতা কোননা কোন বিত্তবান মানুষ। বিএল কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, এমসি কলেজ, এমনকি ঢাকা কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোননা কোন ব্যক্তির সহায়তায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া সফল গভর্নর আতিউর রহমান সাহেবও পড়ালেখা করেছেন এলাকার মানুষের আর্থিক সহায়তায়। কিন্তু অতীতে এমন খবর কেউ শুনেছেন বলে আমার জানা নেই।

যে ব্যক্তি এই অভিনব কৌশলে বৃত্তির টাকার পরিমান নির্ধারণ করেছে, তিনি কীভাবে টাকার মালিক হয়েছেন, কতটুকু শিক্ষা লাভ করছেন, তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কী, তার এমন করার উদ্দেশ্য কী, তার অতীত কী ইত্যাদি আমার জানার সুযোগ হয়নি এখনো। যতটুকু ধারণা করছি তা হলো, তিনি প্রচার চেয়েছে। এখানে তিনি সফল। যদিও ধর্মীয় ভাবে বলা আছে, তোমরা এমন ভাবে অন্যকে সাহায্য সহযোগীতা করো যেন তোমার বাম হাতও তা জানতে না পারে।

এই বৃত্তিদাতার উদ্দেশ্য যদি মহৎ হতো তবে তিনি এই বৃত্তির টাকার পরিমাণ অন্য অনেকভাবেই নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে ২১ হাজার বা ৫২ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের শিক্ষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে ৬৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি ধরে ৭১ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। হয়ত তিনি এ সকল চেতনার ধারক বাহক নন। তাই তিনি তা করেন নি। তিনি গরু ছাগল হাস মুরগির মত ওজন করে মানুষ কিনতে চেয়েছেন। কিনেছেন। জানান দিতে চেয়েছেন। দিয়েছেন। প্রচার পেতে চেয়েছেন। পেয়েছেন। মেধাবীদের বোকা বানাতে চেয়েছেন। পেরেছেন।

মেধাবীরা, তাদের অভিভাবকেরা, তাদের শিক্ষকেরা সবাই বোকা বনেছেন। তা না হলে তারা এইভাবে নিজেকে পাল্লায় তুলতে যেতেন না, তাদের বাবা মা তাদের যেতে দিতেন না, তাদের শিক্ষকেরা সেই অনুষ্ঠানে থাকতেন না। মানুষের গোশতের মূল্যইতো নির্ধারিত হলো। যার শরীরে গোশত বেশি সে টাকা পেলো বেশি, আর যার শরীরে গোশত কম সে টাকাও পেল কম। যে কম টাকা পেল সে হয়ত আপসোস করেছে। তার বাবামা হয়ত মনেমনে বলেছে, আহ আমাদের ছেলেটা যদি আরো মোটাতাজা হতো তাহলে আরো বেশি টাকা পেতাম। যেমন কোরবানির হাটে আপসোস করে দুর্বল গরু ছাগলের রাখাল। মেধাতো সমানই ছিল। টাকাতো সমান হলোনা। তাহলে মেধার মূল্যায়ন হলো কেমন করে? এখন একটু হিসেব করলেই জানাযাবে, মানুষের গোশত কত টাকা কেজি? জী, মাত্র ৬২৯ টাকা কেজি। যা গরু ছাগলের চেয়ে সামান্য বেশি আরসিং মাগুরের চেয়ে বেশ কিছুটা কম।এই দুই মেধাবীর কেউ যদি মেয়ে হতো তাহলে নিশ্চয়ই তাকেও অনুরূপ পাল্লায় তোলা হতো।

এই মেধাবীদের অভিভাবকদের কি এতই অভাব ছিলো টাকার। তারাও তো বলতে পারতো আমাদের সন্তানদের ওজন করতে দিবনা। আপনি নিজেকে ওজন করুন। আমরা পন্য না। কিন্তু আমরা মেধাবীরা, মেধাবীদের ভাই বোনেরা, বন্ধু বান্ধবেরা, অভিভাবকেরা, হিতাকাংখিরা, এমনকি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা কেউই তা পারলাম না। টাকার কাছেই কি হেরে গেলো আমাদের বিবেক বিবেচনা, জ্ঞান বুদ্ধি, মান সম্মান? এতই কি অধঃপতন হয়েছে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের? না, তা হতে পারেনা। তা হতে দেওয়া যায়না।

কেননা- “মানুষকে পাল্লায় মাপা ও সমপরিমান টাকা দেওয়া আইডিয়াটি দৃষ্টিকটু।”

“আমার মতে ওরা আজও শিক্ষিত হতে পারেনি। স্বশিক্ষিত মানুষ কখনও এমনটা করতে পারে না। দাতার অহংকার প্রকাশিত হয়েছে।  এমনটা আদৌ গ্রহণ করার মত নয়।”

“ওজন দিয়ে মেধার মূল্যায়ন হয় না।  এটা কোন বৃত্তি বলে আমার মনে হয়নি।”

মো. রহমত উল্লাহ্: অধ্যক্ষ, লেখক ও শিক্ষাবিদ।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080242156982422