অনুমোদনহীন ‘ক্যাডেট’ মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে যত্রতত্র গড়ে উঠা এ ধরনের মাদ্রাসার তালিকা করা হবে। এরপর এগুলোকে শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নেবে না সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী দুই-এক দিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হচ্ছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ২ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্যাডেট মাদ্রাসা নিয়ে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে ক্যাডেট মাদ্রাসার তালিকা করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ডিইও) চিঠি পাঠানো হবে।
মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোমবার (৬ই মার্চ) তিনি বলেন, ‘ক্যাডেট মাদ্রাসার বিষয়ে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা কর্মকর্তারা সারা দেশে ক্যাডেট মাদ্রাসার তালিকা করবেন। এ সময় তারা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় সরকারি কোনো অনুমোদন আছে কিনা তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এসব মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়, কারা পড়ান, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, আয়-ব্যয়ের উৎস ইত্যাদিও দেখা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া ‘ক্যাডেট’ নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না। ক্যাডেট কলেজ নামে যা আছে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালনা করে থাকে। বেসরকারি খাতে একটি ক্যাডেট কলেজ থাকলেও তা সরকারের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘আলটিমেটলি ক্যাডেট নামে কোনো মাদ্রাসা থাকবে না। যারা এটা খুলে বসেছেন তারা দ্বীনি শিক্ষার জন্য নয়, মূলত তাদের ব্যবসাই উদ্দেশ্য। তাই এসব প্রতিষ্ঠান হয়তো থাকবে কিন্তু ক্যাডেট শব্দ বাদ দিতে হবে।’
গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় বিশেষ আয়োজন ছিল বাংলাদেশের কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক। ওই দিন প্রথম পাতার শীর্ষ খবরসহ মোট ৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। এর একটি ছিল ‘অনুমোদন নেই ক্যাডেট মাদ্রাসার’। তাতে এ শিক্ষা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানের হলেও মাদ্রাসার নামের সঙ্গে ক্যাডেট শব্দ যোগ করে রাজধানীসহ সারা দেশে অসংখ্য মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। এ ধরনের মাদ্রাসার মূল বিশেষত্ব হচ্ছে একই সঙ্গে কওমি, নূরানী, কারিয়ানি, হিফয, সাধারণ মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তাকে কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। পাশাপাশি সাধারণ মাদ্রাসার মতো ইবতেদায়ী স্তরের পাঠদান করা হয়। মূলত ধর্মভীরু মানুষের সন্তানকে মাদ্রাসার প্রতি আকৃষ্ট করতেই একশ্রেণীর মানুষ এটা করেছে বলে জানা গেছে।
আরও অভিযোগ, অধিকাংশ ক্যাডেট মাদ্রাসায় সরকার অনুমোদিত কোনো সিলেবাস পড়ানো হয় না। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, পাঠদান ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম একেবারেই সাধারণ। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো দক্ষ শিক্ষক। দুুই-তিন রুম ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ ধরনের মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নীতিমালা, নিয়মনীতি ও সরকারের অনুমোদনও নেই। গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শনকালে এমন অসংখ্য মাদ্রাসা দেখা গেছে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ সারা দেশেই এভাবে অসংখ্য ক্যাডেট মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্যা বলেন, উত্তরার একটি ছাড়া সারা দেশে ক্যাডেট নামে যেসব মাদ্রাসা আছে সেগুলোর কোনো অনুমোদন মাদ্রাসা বোর্ড থেকে নেয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বেশিরভাগ ক্যাডেট মাদ্রাসার মালিক হিসেবে জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নাম পাওয়া গেছে। তবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারাও জড়িত। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে কওমি মাদ্রাসার পাশাপাশি এসব ক্যাডেট মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীও অংশ নেয় বলে অভিযোগ আছে।