‘এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে-এই দিন নিয়ে যাবে, সেই দিনের কাছে’। মুরুব্বিদের মুখে শোনা কথা-‘চিরদিন কারো সমান যায় না’।
সে দিন আর খুব বেশী দূরে নয়, যেদিন এ দেশে শিক্ষকদের কোন দুঃখ-দুর্দশা কিংবা অভাব-অভিযোগ থাকবে না । নানা দিক থেকে আমাদের এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে । প্রকৃত অগ্রগতির জন্য একদিন না একদিন আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি সুনজর দিতেই হবে । সে কৃতিত্বটা কার ঘরে ওঠে, কে জানে ? তবে, এ মূহুর্তে দেশে সবচেয়ে অবহেলিত সম্প্রদায় হচ্ছেন দেশের শিক্ষক সমাজ ; বিশেষ করে ‘বেসরকারি’ বলে কথিত শিক্ষকগণ ।
দেশের এমপিওবিহীন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষক যাই বলিনা কেন – সবাই কিন্তু ‘বেসরকারি শিক্ষক’ বলে অভিহিত । সরকার এমপিওভুক্তদের বেতন ভাতার সিংহ ভাগ দেয় । তারপর ও তারা ‘বেসরকারি’ বলে অভিহিত হন কোন যুক্তিতে ? সরকার থেকে তাদের শত ভাগ স্কেলে বেতন দেয়া হয়, কম-বেশ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ঈদ বোনাস , পেনসন সুবিধা ইত্যাদি দেয়া হয়-তার ওপর এরা ‘বেসরকারি’ কোন বিবেচনায় ? সে অনেকের বোধগম্য নয় । সরকার ও এত কিছু দেবার পর এর কোন প্রতিবাদ করেনা । যারা সরকার থেকে কোন বেতন-ভাতা পান না, সঙ্গত কারণে তারা ও ‘বেসরকারি’ বলে অভিহিত হতে পারেন না । কেননা-শিক্ষক তো শিক্ষকই । তাকে ‘সরকারি’ কিংবা ‘বেসরকারি’ ফ্রেমে আবদ্ধ করা ঠিক হয় না । যাদের ‘বেসরকারি’ বলে অভিহিত করা হয়, তারা ও তো সরকারি নিয়ম নীতি মেনে স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসা পরিচালনা করেন । সরকারের আদেশ-নিষেদ মান্য করেন। সরকারি সিলেবাস ও কারিকুলামের আলোকে ছেলেমেয়েদের পাঠদান করেন । দেশ ও জাতি গঠনে নিরলস পরিশ্রম করেন । রাষ্ট্রের জন্য সুনাগরিক তৈরী করে দেন । দেশের যে কোন প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না।
নিশ্চয় এ সব বেসরকারি শিক্ষকদের কপাল একদিন ফেরবেই । কেননা, সৎ পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না । মহৎ কর্ম সুফল বয়ে নিয়ে আসেই । কিন্তু, এর আগে কষ্টে তাদের হাড় পানি হবার উপক্রম । যারা এমপিও পান নাই , তাদের প্রতি রাষ্ট্রের এ কেমন অবিচার ? যারা এমপিওভুক্ত তাদের প্রতি কী ষোল আনা বিচার করা হয় ? ‘প্রবৃদ্ধি’ ও ‘বৈশাখী ভাতা’ জাতীয়করণের দু’টো চাকা বিশেষ। চাকা দু’টো অদৃশ্য কারণে জ্যাম হয়ে বসে আছে । এ কেবল এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য । সকলের জন্য এ দু’টো চাকা সচল। ‘বেসরকারি’ শিক্ষকদের জন্য এ চাকা দু’টো একান্ত ‘বেদরকারি’ বুঝি ?
অবিলম্বে চাকা দুটো সচল করে জাতীয়করণের পথ প্রশস্ত করে দিন । একই দেশে ‘সরকারি’
ও ‘বেসরকারি’-দু’শ্রেণির শিক্ষক মোটে ও মানায় না । শিক্ষক ‘বেসরকারি’-শুনতে ও তো বেমানান টেকে । এ আমাদের জাতির হীনতা ও দীনতাকে ফুটিয়ে তোলে । আমরা তো এখন আর কোন দীন-হীন জাতি নই । বিশ্বের বুকে এখন আমরা অমিত সম্ভাবনার দেশ ।
[অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।]