নওগাঁর পোরশা উপজেলায় সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এলাকায় ব্যপক সাড়া জাগিয়েছে। এলাকার ২২৫ জন বিভিন্ন প্রকৃতির প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের নাম মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলা সদরের কপালীর মোড়ে এই বিদ্যালয়টির অবস্থান। পিতার প্রতি শ্রদ্ধা আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসব ছেলেমেয়েদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা থেকে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন স্থানীয় মোঃ শাহজাহান আলী। তিনি স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর পিতার নাম মৃত মোবারক হোসেন। পিতার নামে এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ২২৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১১১ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১১৪ জন। এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীর মোট সংখ্যা ৪৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ জন ও ছাত্রী ২৭ জন। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৭ জন ও ছাত্রী ৩৩ জন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ জন ও ছাত্রী ১২ জন। বাকপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ৪০। এর মধ্যে ছাত্র ২১ জন ও ছাত্রী ১৯ জন। ডাউন সিনড্রম শিক্ষার্থী রয়েছে ৪ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৩ জন ও ছাত্রী ১ জন। সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধীর মোট সংখ্যা ৬ জন। এদের মধ্যে ছাত্র জন ও ছাত্রী ১ জন।
বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৫ জন এবং ছাত্রী ২১ জন। এই বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনা করানো হয়। ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে কোন বেতন নেয়া হয় না। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়াশুনা করানো হয়। প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেনের আরেক ছেলে মওদুদ আহম্মেদ জানান, এই স্কুলে মোট ১১ জন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কোন বেতন গ্রহন করেন না। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা করেন। পড়াশুনা ছাড়াও প্রতিবন্ধী এসব ছাত্র ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে অবস্থানকালীন সময়ে যাবতীয় সেবা প্রদান করে থাকেন। প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শাহজাহান আলী জানান তাঁর পিতা মৃত মোবারক হোসেন ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী।
তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি একান্ত ভালোবাসা থেকেই এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদার, জেলা প্রশাসন এবং পোরশা উপজেলা প্রশাসন অবকাঠামোগত কিছু সহযোগিতা করেছেন। বাকি যাবতীয় খরচ মোঃ শাহজাহান আলীর পরিবার থেকে সংকুলান করা হয়। শিক্ষকদের প্রত্যাশা এক সময় এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে এবং সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। এই আশায় বুক বেঁধে বর্তমানে বেতনসহ কোন সুযোগ সুবিধা ছাড়াই শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।