ত্রয়োদশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীদের সমসাময়িক বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের আলোচিত বিষয় ‘জঙ্গিবাদ’ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হচ্ছে।
আজ সোমবার (২৭শে মার্চ) শিক্ষক নিবন্ধন মৌখিক পরীক্ষার ২৯তম দিনে কুমিল্লা থেকে আসা একজন প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যা বিশ্বে এখন বড় হুমকির কারণ?’
জবাবে ওই প্রার্থী জঙ্গিবাদের কথা বলেন। এরপর তারা জিজ্ঞেস করেন, ‘জঙ্গিবাদের কারণ কী এবং কীভাবে এটা দমন করা যায় বলে আপনি মনে করেন?’
এ প্রশ্নের জবাবে নিবন্ধন প্রার্থী বলেন, ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। এ মূহুর্তে জঙ্গিবাদ দমনে প্রথমে পরিবার থেকে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সাথে চলাফেরা করছে এসব খবর পরিবারকে রাখতে হবে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরো পরিবারই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটা মানুষকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। কোনো সন্দেহজনক পরিবার দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে জানাতে হবে।’
কয়েকদিন ধরেই ভাইভা বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাড়া যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে সেগুলো হল জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংবিধান ইত্যাদি। মৌখিক পরীক্ষা শেষে বেশ কয়েক জন প্রার্থীর সাথে কথা বলে বিষয়গুলো জানা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘জঙ্গিবাদ’ একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে বাংলাদেশে। এটা যেমনি দেশের ক্ষতি সাধন করছে তেমনি দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এজন্য এবিষয়ে মানুষকে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রার্থীরা।
১২ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষার আজকে ২৯তম দিন। গত বছর অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ডাক পেয়েছেন মৌখিক পরীক্ষায়। রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত নিবন্ধন অফিসে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন চলছে মাধ্যমিকের। এতে ৮টি বোর্ডের অধীনে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে নিয়োগের জন্য কয়েকটি বিষয় থেকে ৪১২ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, কৃষি ডিপ্লোমা।
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষার উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। প্রতিবেদনে মৌখিক পরীক্ষার নানা দিক উঠে আসে। ফলে মৌখিক পরীক্ষায় আগ্রহী পাঠকেরা মৌখিক পরীক্ষা সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা পেতে পারেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে এসেছিলেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি পড়াশুনা করেছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে তার ভাইভা অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘পাঁচ মিনিট মত আমাকে বিষয়ভিত্তিক, বাংলাদেশের সংবিধান এবং বাংলা সাহিত্য থেকে কয়েকটা প্রশ্ন করা হয়। ওসমোসাস এবং শ^সনের কাজ কী? ফসফরাস এবং নাইট্রোজেনের অভাবে উদ্ভিদের কী কী লক্ষণ দেখা যায়? মাটির নিচের পানি এবং মূল পানির মধ্যে কোন পানির ঘনত্ব বেশি থাকে? বাংলাদেশের একজন সংবিধান প্রণেতার নাম বলুন। ‘লালসালু’ কার লেখা?’
বাগেরহাট থেকে এসেছিলেন বিশ্বজিৎ রায়। পড়াশুনা করেছেন প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে। ৫ মিনিটের মত তাকে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। ‘কীভাবে মৎস্য চাষের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব? সমন্বিত চাষের মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়? সমন্বিত চাষের কী কী অসুবিধা হতে পারে? পিএইচ এর মান কী? অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্ণয়ে কত মান দরকার হতে পারে? অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের মিডল মান কী হতে পারে?’ এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় তাকে।
চঞ্চল নামের এক প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘বীজ কাকে বলে? ভাল বীজের বৈশিষ্ট্য কী কী? প্রজনন কী? কয় উপায়ে প্রজনন করানো সম্ভব? বীজ ছাড়া আর কতভাবে প্রজনন ঘটানো সম্ভব?’
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের তারিকুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘ফসলকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? কৃষি বনায়ন কী? সামাজিক বনায়ন কী? আপনি তাবলীগে যান কিনা?’
কী কারণে তাবলীগে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হল এমন প্রশ্নে ওই প্রার্থী বলেন, ‘পাঞ্জাবী, পায়জামা আর টুপি পড়ে আসায় আমাকে এ প্রশ্ন করে থাকবে হয়ত।
দিনাজপুুর থেকে আসা মো. কাজি জুয়েলকে ২ মিনিট মত ৩টি প্রশ্ন করা হয়। সুন্দরবনের উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য কী? সালোকসংশ্লেষণ কী? শ্বসন কী?
নরসিংদীর মো. আসাদুজ্জামান মামুনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘জুলোজিক্যাল পার্ক কী? এসিড এবং ক্ষারের মধ্যে পার্থক্য কী কী? ‘নর’ এবং ‘সিংদী’ এই শব্দদ্বয়ের অর্থ কী?
আরেকজন প্রার্থীকে ধানের কয়েকটি পোকার নাম জানতে চাওয়া হয় এরপর ভাইভা পর্ব শেষে তাকে যেতে বলা হয়।