সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে চাই সুযোগ্য শিক্ষক।কেননা অন্যান্য উপাদানও উপকরণ সঠিক থাকলে ও ভালো শিক্ষক না থাকলে ভালো শিক্ষা অসম্ভব।একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় বই,খাতা,কলম,ল্যাপটপ,কম্পিউটার,মাল্টিমিডিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ,সুসজ্জিত,শ্রেণিকক্ষ,অনলাইনপাঠাগার,ডিজিটালবিজ্ঞানাগার,ইত্যাদি অত্যাধুনিকসুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেও শুধু ভালো শিক্ষক দেয়া না হলে তার পক্ষে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়।
একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মেধার সঠিক সমন্বয় ঘটিয়ে সুপ্ত প্রতিভাকে সযত্নে জাগিয়ে লালন-পালনের মাধ্যমে তাকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলা শিক্ষকের প্রধান কাজ।এ কাজ অত্যন্ত জটিল।শিক্ষার্থী ভেদে বিচিত্র মনমানসিকতা অনুধাবন করে একে কজনকে একেক কৌশলে আয়ত্ত করাতে হয় শিক্ষার বিষয়।
শিক্ষাহচ্ছে-“‘শিক্ষার্থীর আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন।”যার জন্য শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ খুবই গুরুত্ব পূর্ণ।শিক্ষকের বিভিন্ন মুখী যোগ্যতা ও দক্ষতা যত বেশি হয় শিক্ষার্থীরা তার প্রতিতত বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়,আকৃষ্ট হয়,মনোযোগী হয়। সফল হয় শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া।
অধিক লাভবান হয় শিক্ষার্থী।অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকের আর্থিক-অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা কমও নিয়োগে দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সত্যিকার মানসম্পন্ন শিক্ষকের খুবই অভাব।ফলে পরীক্ষার ফল ভালো হলেওশিক্ষার মান তুলনা মূলক কম।
একজন অযোগ্য শিক্ষক সারাজীবন তৈরি করে অসংখ্য অযোগ্য নাগরিক,যাদেশ ও জাতির জন্য সীমাহীন অকল্যাণ।শহরের তুলনায় গ্রামে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যাবেশি।তাই সুশিক্ষার অধিকার থেকে অধিক বঞ্চিত গ্রামবাংলার শিক্ষার্থীরা।
দেশ-জাতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার যুক্তিতেই বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে কোটা।শিক্ষক নিয়োগে এর হার সর্বাধিক।এমনকি একোটা পূরণের জন্য শিথিল করা হচ্ছে মেয়েদেরশিক্ষা গত যোগ্যতা! অথচ গভীর ভাবে ভেবে দেখা হচ্ছেনা নতুন শিক্ষা নীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর করা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
অথচ সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে এসএসসি পাশ মহিলা শিক্ষক! তাছড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা, উপজাতিকোটা, প্রতিবন্ধিকোটা, জেলা কোটা ইত্যাদি নানা রকম কোটা সংরক্ষণ করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে অনেক কমযোগ্য শিক্ষক।বাস্তবে কোনো পর্যায়েই এখন আর যোগ্যতার প্রশ্নে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকটা ভিন্ন রকমের।ব্যবসা-বাণিজ্য,শিল্প-কারখানা,ক্লাব-সমিতি ইত্যাদি পণ্য বাসে বা উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠানের মতো স্বল্পমেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সফলতা বাব্যর্থতা মূল্যায়ন করা চলেনা।কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো পণ্যের একক উৎপাদন করেনা।বরং মান সম্পন্ন পণ্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য মানব সম্পদ উৎপাদনের গুরু দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথা শিক্ষকের ও পরন্যস্ত।শিক্ষকগণ মানুষ গড়ার কারিগর।অন্যান্য কারিগরের চেয়ে তারা ভিন্ন।শিক্ষার মূল লক্ষ্য’আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন’একটি দীর্ঘ মেয়াদি মননশীল কর্ম বা ব্রত;যা শিক্ষকের মনের গভীরে লালিত।
শুভ চিন্তা,জাতীয় চেতনা,সুশিক্ষা,ইত্যাদি সুকৌশলে শিক্ষার্থীর মনেরো পণ ও লালন-পালন করতেহ য়।যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির কারখানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।শিক্ষক গণ এ কারখানার কারিগর।তাই যোগ্য মন্ত্রী, আমলা, নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিচারক, আইনবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শ্রমিক-কর্মচারী সবই তৈরির পূর্ব শর্ত সুযোগ্য শিক্ষক।
সরকারি বেসরকারি সব শিক্ষক,প্রশিক্ষক ও হুজুরেরই যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অত্যন্ত ভালোভাবে জানা থাকতে হবে শিক্ষার সংজ্ঞা,শিক্ষারউদ্দেশ্য,শিশু-কিশোর মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রদানের আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি।অবশ্যই থাকতে হবে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিনিয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের ঐকান্তিক ইচ্ছা।তদুপরি একজন শিক্ষককে প্রকৃত শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য তার থাকা চাই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।তাই দেশ ও জাতির সুদূর প্রসারী কল্যাণার্থে এখন আমাদের স্লোগানহোক- ‘আর নয় অযোগ্য শিক্ষক’।
দুর্নীতি মুক্ত,সন্ত্রাস মুক্ত,জঙ্গিবাদ মুক্ত,সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশগড়ার উপযোগী সুযোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির জন্য চাই অধিক যোগ্য শিক্ষক।এক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ করা মানেই জাতিকে পঙ্গু করার পথ আরো বেশি প্রসস্ত করা।
লেখক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।