শিক্ষক নিয়োগে ‘লেজে গোবরে অবস্থা’ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক নিয়োগে ‘লেজে গোবরে অবস্থা’

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

এমপিওভুক্ত স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে এখন দ্বৈত নীতি । প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা সহকারি প্রধান অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক, সুপার ও অধ্যক্ষ এবং সহকারি প্রধানসহ সুপার ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ এখনো কমিটির হাতে আর অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ’র কাছে। বোধগম্য হয় না যে, কেন এ দ্বৈত ব্যবস্থা ? এনটিআরসিএ’র কী প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেবার মতো যোগ্যতা নেই ? নাকি এসএমসি ও জিবি এ সব পদে নিয়োগ দেবার ক্ষেত্রে খুব বেশী স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ? হতে পারে প্রশাসনিক পদে ইমার্জেন্সি নিয়োগের প্রয়োজন বিধায় এনটিআরসিএ এ নিয়োগ তাদের হাতে নেয়নি বা নিতে চায়নি । প্রশাসনিক পদগুলো নিঃসন্দেহে যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের পদ খালি থাকলে প্রশাসনিক পদটি নানা কারণে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে । এ সব প খালি থাকলে প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয় ।

পৃথিবীর আর কোথাও এ রকম আছে কীনা জানা নেই যে, শিক্ষার একই পর্যায়ে নিয়োগের বেলায় দ্বৈত নিয়ম। আমাদের দেশে ও তো এ রকম আর শিক্ষার অন্য কোন স্তর বা ক্ষেত্রে তা নেই। আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে কেন্দ্রীয় নিয়োগ ব্যবস্থার ঈঙ্গিত আছে, তাতে তো সকল নিয়োগ কেন্দ্রিয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটির কাছে ন্যস্ত হবার সুপারিশ । তাহলে, এরুপ কেন হলো ?

বেসরকারি বলি আর এমপিওভুক্ত বলি, এ সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের দেশে কারো কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না । তাই, এদের নিয়ে যার যা ইচ্ছে- তার তাই করা । কিন্তু এমপিওভুক্ত স্কুল,কলেজ কিংবা মাদ্রাসা যেটির কথাই বলি না কেন – যার যার ক্ষেত্রে ৯৮% শিক্ষা ব্যবস্থাই তো এদের মাধ্যমে পরিচালিত । বাকী ২% মাত্র সরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার মাধ্যমে চলে । কিন্তু, যতো অবহেলা আর অমনোযোগিতা সবি এমপিওভুক্ত স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার বেলায় ! এমপিও শিক্ষকদের বেতন সময় মত দিতে আপত্তি, ইনক্রিমেন্ট দিতে মন বেজার, বৈশাখি ভাতা প্রদানে দিল নারাজ, বাড়ি ভাড়া-উৎসব ভাতা যতো পারো কম দাও,যতো পারো বিলম্বে কল্যাণ ও পেনশনের টাকা দাও, জাতীয়করণ করার প্রশ্নই ওঠে না-ইত্যাদি হীনমন্য মনোভাব একটা পক্ষের ইস্পাত-কঠিন । বিসিএস ক্যাডারদের আর কতো ক্যাডারি দেখবো ! আত্মীকরণ বিতর্কের জন্ম দিয়ে এরা কী হীনমন্যতাই না দেখিয়ে যাচ্ছেন ! এদের হাতেই তো বেসরকারি ও এমপিওভুক্তদের জীবনটা সঁপে দেয়া !

ভিন্ন প্রসঙ্গে নয়, আসল কথায় আসি। বলছিলাম সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে ।

এনটিআরসিএ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুন্য পদের হিসাব নিয়ে সে সব পদে নিয়োগ দানের জন্য শিক্ষক বাছাই করে নিয়োগের জন্য এসএমসি ও জিবি বরাবরে প্রেরণ করে। এ ভাবে তারা ইতোমধ্যে দু’বার এ কাজটি করে ফেলেছে । কিন্তু, তাদের এ কার্যক্রম সূচনায়ই বিতর্কের সূত্রপাতে জড়িয়ে গেছে । তারা একেক প্রার্থীকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করেছে । শুনেছি,কোথাও কোথাও একজনকে দশ-পনেরটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তারা মনোনয়ন দিয়েছে । আবার এ পর্যায়ে তারা এমপিও বিহীন প্রতিষ্ঠানের শুন্য পদে ও শিক্ষক মনোনয়ন দিয়েছে ।

অনেক প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ’র নিয়োগের জন্য মনোনয়নকে আমলেই নেয়নি । আবার, এমপিও বিহীন প্রতিষ্ঠানে যাদের পাঠানো হলো, তাদের বেতন কে দেবে ?

অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কোন কোন বিষয়ে রিক্যুইজিশন নিয়ে ও কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি । মোদ্দা কথা, এ সবই যেন এলোমেলো ও হ-য-ব-র-ল টাইপে চলছে । এ করে তো বেসরকারি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজতে শুরু করবে । এমনিতেই কোন প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই । তদুপরি, এনটিআরসিএ যদি শিক্ষক নিয়োগে আরো কার্যকরি ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চরম শিক্ষক সংকটের মধ্যে পড়বে । ব্যাহত হবে লেখাপড়া । হোচট খাবে গোটা জাতি।ক্ষতি হবে আগামী প্রজন্মের ।

সকল নিয়োগ একটি কর্তৃপক্ষের হাতে নিয়ে নিলে ভাল হয় । একই কাজে ক্ষমতার ভাগাভাগি সুফল দেয় না। এনটিআরসিএ যাদের নিয়োগের জন্য বাছাই করবে, তাদের অবশ্যই যেন নিয়োগ দানে কেউ টালবাহানা করতে না পারে । এনটিআরসিএ’র নাম পরিবর্তন করে ‘শিক্ষক নির্বাচন কর্তৃপক্ষ’ বা এ জাতীয় অন্য কিছু রাখা মানানসই হবে । তাতে তাদের মনোনয়নকে কেউ অবহেলা করতে পারবে না ।

আসলে সব সমস্যার একটাই সমাধান ছিল -শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ । শিক্ষার প্রাথমিক স্তরটি জাতীয়কৃত বলে আজ সেটি অনেক পরিপাটি ও গোছালো। শিক্ষক সংকট প্রাথমিক স্তরে একেবারে নেই বললে চলে । উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীরা পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকতার জন্য ধাবিত হচ্ছেন । প্রাথমিক শিক্ষা স্তর জাতীয়করণের বিয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে ও আজো আমাদের এর পরবর্তী স্তর জাতীয়করণের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। তা হলে আমাদের শিক্ষায় সুনাম ও সুফল আসবে কী করে ? পর্যায়ক্রমে এগিয়ে গেলে এতদিনে আমাদের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই জাতীয়করণ হয়ে যেত। আর তা হলে মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে এতদিনে আমরা উন্নত দেশে পৌঁছার জন্য যোজন যোজন মাইল এগিয়ে যেতাম ।

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট  ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035989284515381