শিক্ষক নিয়োগ: সরকারিভাবে নির্বাচিতদের ভোগান্তির শেষ নেই - Dainikshiksha

শিক্ষক নিয়োগ: সরকারিভাবে নির্বাচিতদের ভোগান্তির শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রার্থীদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না্। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্বাচিত প্রার্থীদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান যোগ দিতে দিচ্ছে না। কোথাও কলেজ জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হওয়ায় নিয়োগ পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। অথচ দু’মাস আগে এসব প্রার্থী নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে অনেকেই ঘুরছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) আর মন্ত্রণালয়ের বারান্দায়। এসব দফতরে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে এনটিআরসিএ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করে দিয়েছি। এখন এসব প্রার্থীকে নিয়োগ দেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হলে তা মন্ত্রণালয়ই সমাধান করবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা শুধু প্রার্থী বাছাই করা। নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিষয়টি তাদের নয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম জাকির হোসেন ভূঁঞা সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়ন অনুযায়ী যোগ দিতে না পারার বিষয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। নারী কোটা, প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণভুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। জরুরি পরিস্থিতির কারণে সেই বৈঠক হয়নি। শিগগিরই আরেকটি বৈঠক ডেকে উদ্ভূত সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান করা হবে। তবে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ওইসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করা হতে পারে।

চট্টগ্রামের মীরেরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট কলেজে গণিত বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন বিবি আসমা। শিক্ষাজীবনে সব পাবলিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ এ নারীকে কোথাও মনোনয়নই দেয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীর দফতরের ভেতরে বসে আলাপকালে আসমা  বলেন, তাকে বাদ দিয়ে এনটিআরসিএ প্রথম দফায় প্রভাষক পদে একজন স্কুল নিবন্ধনধারী নারীকে নির্বাচিত করে। দ্বিতীয় দফায় একজন পুরুষকে নির্বাচিত করে।

মনোনয়ন পাওয়া কলেজ জাতীয়করণের প্রক্রিয়াধানী থাকায় নওগাঁর মান্দা মমিন শাহানা ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদে নির্বাচিত রিক্তা খানম (পদার্থবিদ্যা), লুৎফা খাতুন (বাংলা), সাবিনা ইয়াসমিন (ভূগোল), আসমা ইসলামসহ (অর্থনীতি) অনেকে যোগ দিতে পারছেন না। তারা নিরুপায় হয়ে শিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রতিকার না পেলে তারা আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি রাজশাহীর তানোর উপজেলার আবদুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে মনোনয়ন পাওয়া মোসা. সানজিদা শারমিন, মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. আবুল কালাম আজাদ। মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম নামে এক প্রার্থীর অভিযোগ, তাকে বরগুনা জেলার রূপধন কাকচিড়া নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য দুই দফায় নির্বাচিত করে এনটিআরসিএ। কিন্তু তিনি মাদ্রাসায় গিয়ে কোনো সহায়তা পাননি। এমনিভাবে অসংখ্য প্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত হয়ে প্রায় দৈনিকই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিয়োগ নিয়ে এমন জটিলতার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক ২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা চেয়ে পত্র দেন। তাতে তিনটি বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। তা হচ্ছে- ১. অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে এনটিআরসিএ নির্বাচিত শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেয়া যাবে কিনা; ২. প্রতিষ্ঠানে কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলমান থাকলে নির্বাচিত শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেবেন কিনা বা অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক/সুপার সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগপত্র দিতে পারবেন কিনা এবং ৩. জাতীয়করণের জন্য অনুমোদিত যেসব বেসরকারি স্কুল ও কলেজে এরই মধ্যে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ নির্বাচিত শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া যাবে কিনা।

এর প্ররিপ্রেক্ষিত্রে ১৪ নভেম্বর মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়েছে, এনটিআরসিএ’র সুপারিশ করা শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র জারি করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ম্যানেজিং কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে কোনো কমিটি নেই বা নিয়োগপত্র জারি করতে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলোর প্রধানদের এনটিআরসিএ সুপারিশকৃতদের সুবিধার্থে নিয়োগপত্র জারি করতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পর ওই শিক্ষকদের নিয়োগপত্র ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো কমিটি নেই সেগুলোকে অতিসত্বর কমিটি গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এনটিআরসিএ সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য দুটি তালিকা প্রকাশ করে। নির্বাচিতদের ১ মাসের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত কয়েকশত নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।

বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিষ্ঠিত অভিযোগের কারণে সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রবর্তন করে। সে অনুযায়ী এনটিআরসিএ মনোনীত প্রার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে।

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032031536102295