জঙ্গি তৎপরতা রোধ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি প্রতিরোধ সেল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই সেল শিক্ষার্থীদের আচরণ মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি করবে। কোনো শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক আচরণ বা সন্দেহভাজন গতিবিধি দেখলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে মোটিভেশন করা হবে।
এতে কাজ না হলে অভিভাবককে জানানো হবে। এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাকে সোপর্দ করা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সচেতন করতে আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে একটি
খসড়া তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কয়েক বছর আগে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইভটিজিং, যৌন হয়রানি বেড়ে যায়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত সেল গঠন করা হয়। এতে যৌন নিপীড়ন ও ইভজিটিংয়ের হার অনেকাংশে কমে আসে। ওই সেলের আদলে জঙ্গি প্রতিরোধ সেল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এই সেল মনিটরিং করবে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয় ও সাধুবাদ জানানোর মতো। জঙ্গি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্ব ইউজিসিকে দিলে আমরা প্রস্তুত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের প্রস্তুাব আসছে।
কোনো শিক্ষার্থী টানা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে আমাদের জানানোর জন্য একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা নিখোঁজ তাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের জঙ্গি তৎপরতা থেকে বিরত রাখতে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি মনোনিবেশ ঘটাতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলছে, চলতি বছর সারাদেশে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন করে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছে। এই সেলে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ছাড়াও ক্লাসে বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী, প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি এই সেলের সদস্য হবেন। তারাই প্রত্যেক মাসে একবার বসবেন।
এছাড়া এই সেলের সবার নাম ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়া হবে। যেকোনো ধরনের তথ্য সেলকে সরাসরি বা লিখিত আকারে জানাতে পারবে। কেউ যদি নাম প্রকাশ না করার শর্তের জানাতে চায় সেটিও করতে পারবে। তবে এই সেলের মাধ্যমে কেউ যেন বিড়ম্বনার শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য কয়েকটি বিষয় যোগ করে দেয়া হবে বলে সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) বেলাল আহমেদ বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। সরকার যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবেই সরকারকে সহযোগিতা করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, সন্তানদের উগ্রপন্থায় জড়ানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক উভয়েই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। কারণ তারা কোথায় কী করছে, ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কিনা, ক্লাসে যাচ্ছে কিনা- এসব খোঁজখবর রাখা হয় না। কেবল সচেতনতায় পারে এসব জঙ্গিবাদকে রুখে দিতে।