তনুর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্বতস্ফূর্ত ধর্মঘট - Dainikshiksha

তনুর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্বতস্ফূর্ত ধর্মঘট

আশিক মাহমুদ |

tanu

সোহাগী জাহান তনুর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্বতস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুমিল্লার এই কলেজছাত্রী খুনের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনি গ্রেপ্তার কিংবা শনাক্ত না হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববারের এই কর্মসূচি ডেকেছিল।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস হয়নি। পরীক্ষা ধর্মঘটের আওতামুক্ত ঘোষণা করায় সেগুলো নির্বিঘ্নে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে, তাতে সবাই একাত্মতা প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু ক্লাসে আসেনি, তাই বেশিরভাগ বিভাগে ক্লাস হচ্ছে না। তবে ব্যবসা অনুষদে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ক্লাস হয়েছে বলে শুনেছি।

বাণিজ্য অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ক্লাস চলতে দেখা গিয়েছিল সকালে। এছাড়া মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগেরও কিছু শিক্ষার্থীও ক্লাস করেছেন। কর্মসূচি আহ্বানকারী ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’র সমন্বয়ক ফারহান শাহরিয়ার পুলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে। তবে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ক্লাস হচ্ছে শুনে আমরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা ক্লাস বর্জন করে।

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের নেতা-কর্মীরা এই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানায়। কার্জন হল এলাকায় একদল শিক্ষকও ছাত্রদের কর্মসূচিতে সংহতি জানায়। ক্লাস বন্ধ রেখে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, কার্জন হল ও দোয়েল চত্বরে সমাবেশ ও মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।

কার্জন হল এলাকায় আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাইশা তাশরিন বলেন, সকালে আমাদের পরীক্ষা থাকে, সে পরীক্ষায় শেষে আমরা এখানে চলে এসেছি। মৎস্যবিজ্ঞানসহ দুয়েকটি বিভাগে ক্লাস হলেও বাকিগুলোতে অংশ নেয়নি কেউ। আমাদের সঙ্গে আমাদের স্যার-ম্যাডামরাও সংহতি জ্ঞাপন করেছেন।

সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত জায়গায় তনুর খুন হওয়ার কারণে এখন নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা প্রকাশ ঘটেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে। দোয়েল চত্বরের সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদাত নূর নাদিয়া বলেন, পত্রিকায় ধর্ষণের খবরগুলো দেখে আমি ভয় পাই। খুনের বীভৎস বর্ণনা দেখে আঁতকে উঠি।

প্রিয়াঙ্কা নামে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার বিচার হয়েছে ১৪ বছর পর। তনুর ঘটনাকেও তো ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে, এর বিচার হবে কি-না সেই সন্দেহ সবার মধ্যে।একটা প্রবাদ আছে- ‘যার যায়, সে বুঝে হায়’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবারের কেউ তনুর মতো ধর্ষণ ও হত্যা ছাড়া কি তারা বুঝবে না?
সাদিয়ার মতো এমন শঙ্কার প্রকাশ ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজের কণ্ঠেও, যিনি বক্তব্য দেন কার্জন হলের সমাবেশে। তিনি বলেন, আমি শিক্ষক। আমার শিক্ষার্থী আছে, আমার মেয়ে আছে। আমরা তাদের জন্য কী পরিবেশ তৈরি করেছি। তারা কি নিরাপদ? তাহলে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কি এমন গলদ আছে, আমরা একজন মেয়েকে নিজের সহযোদ্ধা বা সমপর্যায়ের হিসাবে বিবেচনা করতে পারছি না।

জেবা ইসলাম বলেন, যেখানে আমাদের নারী প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের পাওয়ারফুল লিডারদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন সেখানে আমাদের নারীদের নিরাপত্তা থাকবে না, এটা কী করে হয়? প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। আমার বিশ্বাস এর মধ্য দিয়ে অনেক কঠিন সত্য উন্মোচিত হবে।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছুদিন পর্যন্ত এক ধরনের নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। তরুণরাই রাস্তায় নেমে সেই নীরবতা ভেঙে দিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে তারা ঘরে ফিরে যাবে না। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ক্ষেত্রে ‘ভূমিকা’ রাখায় সেনাবাহিনীর যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তা রক্ষার জন্য হলেও তনু হত্যার ঘটনা উন্মোচিত হবে বলেও মনে করেন অধ্যাপক আনোয়ার। শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশে একদলকর্মী নিয়ে সংহতি জ্ঞাপন করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা অতীতে দেখেছি, এখনও দেখছি রাষ্ট্র ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক ধরনের ইনডেমনিটি দেওয়া হয। তনু হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে আমরা এখন সেরকমটা দেখছি। তদন্তের কোনো অগ্রগতি তো হয়ইনি। বরং অগ্রগতি হয়েছে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যে কেউ জড়িত থাকুক তার জন্য রাষ্ট্র কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বাহিনীর পুরোটাতো আর দায়ী নয়। এক্ষেত্রে জড়িত সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করলেই কেবল এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হবে।

 

tonu

সংগঠক কাইশা তাশরিন বলেন, তনু হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার নানা আলামত দেখা গেছে। এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হয়ে ধামাচাপা দিলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিচার করতে বাধ্য করব। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম, অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।

কার্জন হলের সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কলাভবন এলাকায় থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এক হয়। ধর্মঘট শেষে বিকালে টিএসসির মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বন্ধ রেখে এদিন সমাবেশ-মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে তনুর খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সোমবারও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, যে সংগঠনটি রোববারের কর্মসূচিতেও একাত্ম হয়েছিল।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038270950317383