আমাদের ভেবে দেখা উচিত যে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে। এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে জীবনমান বিনষ্ট হয়ে পড়ে। তারমধ্যেই সবচেয়ে জরুরি চাহিদার একটি খাদ্য। যার অপূর্ণতার যন্ত্রণা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা প্রকাশ করতে গিয়ে কবি “রফিক আজাদ”-এর “ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো” এবং কবি “সুকান্ত ভট্টাচার্য”-এর “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” বিখ্যাত দুটি কবিতার এই লাইনগুলো জন্ম নিয়েছিল। আর এ সকল মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতেই সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী আমাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অমনোযোগী ও অবহেলা করার অভিযোগে আমরা যে শিক্ষকদের এক নিমিষেই অভিযুক্ত করে ফেলছি, তারা কি আদৌ পুরোপুরি এই অভিযোগটির জন্য সত্যিকার অর্থেই দায়ী কিনা!
তারাও মানুষ এবং বেঁচে থাকার তাগিদে সকল মানুষের মত তাদেরও সব ধরনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়। আর যার জন্য অবশ্যই অর্থের প্রয়োজনের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের উপার্জন ক্ষমতা দুটি যেন দুই মেরুর বাসিন্দা। অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের তুলনায়ও শিক্ষকদের অবস্থান এ ক্ষেত্রে অতি নগণ্য। অনেক সময় এমনও দেখা যায় জাতির সবচেয়ে বেশি সম্মানজনক এই শ্রেণির চাইতে অনেক ছোট ছোট কর্মজীবীরাও মাস শেষে তাদের থেকে বেশি বেতন ভাতা পাচ্ছে। অথচ আমরা প্রতিনিয়তই নিজেদের শিক্ষা মান ও পদ্ধতির সঙ্গে বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা করে থাকি। তখন হয়তো আমরা ভুলে যাই, সে সকল দেশই এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যমণিই এবং মর্যাদা ও বেতনের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থান এই শিক্ষক শ্রেণিরই।
মানুষের অভাব অপরিসীম। সে তুলনায় অর্থের যোগান কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সকল অভাব কখনোই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তবে যে মৌলিক অভাবগুলো অর্থের অভাবে অপূর্ণ থেকে গেলে জীবন মানই বিনষ্ট হয়ে যায়, তা পূরণ করতে পারা প্রতিটা মানুষেরই অধিকার।
কথায় আছে, খালি পেটে সৃষ্টিকর্তার আরাধনাতেও মন বসে না। আর সেখানে এই অভাবগুলোই যখন একজন মানুষ পূরণ করতে বারবার ব্যর্থ হবে, তখন তো স্বাভাবিকভাবেই তাদের জীবনসহ সকল প্রকার কর্মকাণ্ডের প্রতি অনীহা ও অবহেলার সৃষ্টি হবেই। ফলশ্রুতিতে তারা অধিক উপার্জনের লক্ষ্যে স্কুল-কলেজে নিয়মিত পাঠদান প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট শ্রম ব্যয় না করে বেশির ভাগ সময় প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়ানোর দিকেও ঝুঁকে পড়বে। কাজেই অভিযোগ করার আগে আমাদের উচিত তা খুঁতিয়ে দেখে তার প্রতিকার করা। তবে আশার কথা হলো সরকার যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা ও উদ্যোগ নিচ্ছেন বাংলাদেশের শিক্ষকদের আয়ের মান বৃদ্ধি করে জীবনমান সমৃদ্ধ করার জন্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এক দফায় শিক্ষকদের বেতন ও বোনাস বাড়ানোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আশা করা যাচ্ছে, সরকার শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে আরও অধিক পরিমাণ সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।
লেখক :শিক্ষার্থী,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়