আজকাল ব্যস্ত নাগরিকজীবনে আমাদের অবসর নেই স্কুলপড়ুয়া ছোটভাই কিংবা বোনটির কথা ভাববার। গত ৫ জুলাই তারুণ্যের সমকালীন চিন্তা-য় মারওয়া হকের ‘শিক্ষার্থীদের আকুতি’ লেখাটির কথা আবার মনে পড়ল। তাঁর লেখায় পড়া ঘটনার অনুরূপ কিছ ুঘটনার মুখোমুখি হয়ে।
পরীক্ষা আর পড়াশোনাটা এখনকার শিক্ষার্থীদের জীবনের ষোলআনার কত আনা সেটা যেন ভুলতে বসেছি আমরা। পড়াশোনাকে শ্রেণিকক্ষের পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডিতে বেঁধে রাখায় শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি থেকে, বঞ্চিত হচ্ছে আনন্দ ও জীবন ঘনিষ্ট ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে। চার দেয়ালে বন্দি থেকে বিষণ্নতায় ভুগতে দেখছি কিশোর-কিশোরীদের। অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধে বাস্তব এ সমস্যাটির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার সহিত জীবনের গৃহবিচ্ছেদ ক্রমশ বাড়িয়া উঠে, প্রতিমুহূর্তে পরসপর পরসপরকে সুতীব্র পরিহাস করিতে থাকে এবং অসমপূর্ণ জীবন ও অসমপূর্ণ শিক্ষা লইয়া বাঙ্গালির সংসারযাত্রা দুই-ই সঙের প্রহসন হইয়া দাঁড়ায়।’
তাই যখন বাড়ির পেছনে কিশোর দলের মাদক নেওয়া দেখি কিংবা বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে ছাত্রের মৃত্যুর খবর শুনি তখন এগুলো কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা কি না তাই ভাবতে বসি। সেদিন এক ছোট বোনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম অনেকদিন ধরে অজানা কারণে অসুস্থ ছিল সে। পরবর্তী সময়ে ডাক্তার বুঝতে পারেন রোগটি তার শরীরে নয়, মনে। তার শৈশব কেটেছে রাঙামাটির মুক্ত পরিবেশে। সে জায়গা ছেড়ে যখন তাকে ঢাকা শহরে আসতে হয় তখন সে মেনে নিতে পারেনি ঢাকা শহরের এই বন্দিত্ব, স্কুলে পরীক্ষার চাপ। অথচ ‘স্কুলে এবং জীবনে কাজের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে কাজের আনন্দ, কাজের ফলাফলের আনন্দ এবং সেই ফলাফল সমাজের কাছে মূল্যবান হয়ে উঠলে তা জানার আনন্দ’—আলবার্ট আইনস্টাইনের এ কথাগুলো আজকের সমাজের জন্য অত্যন্ত দরকারি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের পরিবারেই ফটিকের মতো এমন হাজারো কিশোর-কিশোরী আজ অদৃশ্য খাঁচায় বন্দি । তাদের আকুতি চাপা পড়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও নিষ্ঠুর আকাঙ্ক্ষার কাছে। দেরি হলেও তাদের এসব শিক্ষার্থীর শৈশব হারানোর হাহাকার আমাদের শুনতে হবে আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই।
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়