জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর ব্যাচেলরদের আবাসিক সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে রাজধানী ঢাকায়। পুরনো ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছেন অনেক বাড়ির মালিক। নতুন করে তাদের বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না।
ঢাকায় বিভিন্ন মেসে বা বাসা ভাড়া নিয়ে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীরাও সংকটে পড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো আবাসিক সুবিধা নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বা সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে সব শিক্ষার্থীর জায়গা হয় না। ফলে তাদের মেস বা বাড়ি ভাড়া নিতে হয়।
রাজধানীতে তেমন মানসম্মত মেসের সংখ্যা খুব বেশি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কয়েকজন মিলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। সাম্প্র্রতিক পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিকরা শিক্ষার্থী বা ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে নারাজ। ফলে বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকেই।
রাজধানীতে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাসকারীদের একটি বড় অংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ২৪ বছর। এই দুই যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫। এর মধ্যে ৫০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ঢাকায়। প্রতিষ্ঠান গড়লেও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধার কথা ভাবেনি কর্তৃপক্ষ।
বাধ্য হয়ে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা দেওয়া দূরে থাক, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত নিজস্ব ক্যাম্পাসেই যেতে পারেনি। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজস্ব ক্যাম্পাসের বাধ্যবাধকতার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থার কোনো বাধ্যবাধকতা সরকারের পক্ষ থেকেও রাখা হয়নি।
ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায়নি। সাম্প্র্রতিক সময়ে সংকট নিরসনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে বা কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে বাসা ভাড়া নেওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করার চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের কাছাকাছি একাধিক বাড়ি ভাড়া নিয়ে হোস্টেল গড়ে তুলতে পারে। বাড়ির মালিকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হবে। তাতে শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে লেখাপড়া করতে পারবে।
অভিভাবকদের কাছেও প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করব, আবাসন সংকটের কারণে কোনো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না।
দৈনিক ইওেফাকের সম্পাদকীয়