শিক্ষার প্রেমই আমার অহংকার - Dainikshiksha

শিক্ষার প্রেমই আমার অহংকার

মো: সিদ্দিকুর রহমান |

স্বাধীনতার শুভলগ্নে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে যাত্রা যাদের অনুপ্রেরণায় তারা হলেন বিএনপি নেতা আবদুস সালামসহ শহীদ মানিক স্মৃতি সংসদের অগণিত বন্ধু বান্ধব। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে যাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি তারা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ড. কামাল হোসেন ও গাজী গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

শিক্ষকতা শুরুর এক বছর পর ১৯৭৩ সালে শহীদ মানিক স্মৃতি সংসদের নামে একুশের স্মরণিকা ‘অনুপ্রেরণা’ প্রকাশ করতে সহযোগিতা পেয়েছি তৎকালীন ছাত্রনেতা আজকের যুগান্তরের বিশিষ্ট কলাম লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব কামালের।

১৯৭৪ সালে সরকার প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১০ টাকা দায়িত্ব-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিষয় আমাকে ভীষণ ভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এত ব্যাপক দায়িত্ব অথচ মাত্র ১০ টাকা নিয়ে তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাকে প্রথম ছাপা হয় আমার  ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ। সে থেকে শুরু হয় আমার পত্রিকায় প্রথম লেখা। সে লেখার প্রেম থেকে আজও আমি বিচ্যুত হইনি।

আজও মোটেই ঘাটতি অনুভব হয়নি সে প্রতিবাদী প্রেমের। সে থেকে শিশু তথা প্রাথমিক শিক্ষার  সকল অসংগতি, অন্যায়, বৈষম্য বার্ধক্য বা অসুস্থতা আমাকে ক্লান্ত করতে পারেনি। যাদের সহযোগিতায়  লেখার প্রতি আমার ভালোবাসা গভীরভাবে উজ্জীবিত করার সুযোগ এনে দিয়েছে তারা হলেন সাংবাদিক আবদুল কাইয়ূম মুকুল, অজয় দাশ গুপ্ত, আসিফ রশীদ, সিদ্দিকুর রহমান খানসহ অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী।

সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা দরিদ্রতা, অসুস্থতা বা পরিবারের দুঃখ-কষ্ট, অভাবের যন্ত্রণা সবকিছু ভুলে যাই। আমার ভালোবাসার সফলতা বুক ভরা আনন্দ বয়ে আনে। পাশাপাশি ব্যথিত হই ফেসবুকের মাধ্যমে আজকের শিক্ষক নেতৃত্বের পথ চলা ও ভাবনা নিয়ে। দীর্ঘদিন একজন কর্মী হিসেবে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধানে কাজ করেছি। অনেক সফলতার মাঝে আজও বর্তমান নেতাদের মতো নেতৃত্বের স্বাদ পাইনি।

শিক্ষকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে অহেতুক চাঁদা আদায় যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদা ও বেতন স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের প্রায় সকল সংগঠন চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে। শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম না থাকলেও চাঁদাবাজি কার্যক্রমে এক সাথে সুর করে বাজনা বাজিয়েছেন। তারা আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, কোটি কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ করতে টাকা ছাড়া হবে না। সংগঠনগুলো ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সর্বশক্তি দিয়ে চাঁদা আদায় করেছেন। অথচ ৩ বছরেও সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য, প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলের জটিলতা দূর হয়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করার অবকাশ নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে সবার দাবি আদায়সহ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এগোতে হবে। বিগত সময়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেশিরভাগ সমস্যা সম্মেলন ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় হয়েছে।

১৯৭৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের থানার বাহিরে বদলি, প্রধান শিক্ষকদের ৩শ টাকার স্কেল থেকে ৩শ ২৫ টাকায় উন্নীত হয়। ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩ মাস ১০ দিনের ধর্মঘটে গ্রাম সরকার ও মিউনিসিপ্যালটি হস্তান্তর আইন বাতিল। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষকদের এমএলএসএস সমান বেতন থেকে মুক্তি। আজকের প্রধান শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বের পদায়ন নিয়ে চাঁদাবাজির বাজার আবার সরব হয়ে ওঠেছে। আজকের দিনে মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দুর্নীতি মুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা গড়ে তোলার আহবান জানাই। কতিপয় নেতৃৃবৃন্দের অনৈতিক কাজ আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করে। আজকের নেতারা মন্ত্রী প্রশাসন হোমরা চোমরা পাশে ছবি তুলে নেতা বনে যায়। নেতৃত্বের কৃত্রিম স্বাদ পাওয়ার মোহ আমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেনি। শিক্ষকদের ভালোবাসা থেকে কেউই দূরে ঠেলে দিতে পারেনি। মন্ত্রী প্রশাসনের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ আজও আমার নেই।

সে ১০ টাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেমে পড়া আজ আমার জীবনের অহংকার। রমজানের মাঝে রিক্সা থেকে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ও চিকুনগুনিয়া জ্বর আমার লেখার ভালোবাসা থেকে কতটুকু বিচ্যুত করছে আমার জানা নেই। এ বছরে রমজান মাসে বিভিন্ন পত্রিকায় ৮টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সবার ধারণা দুর্ঘটনা ও জ্বরে আমি গৃহে বিশ্রামে আছি। ঈদের পর অফিস খোলার দিন। দেখতে এসেছেন কবি ও নিবন্ধকার ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী । তার মতো অনেকেরই ভাবনা ছিল ঈদে অসুস্থ লোকটি নির্ঘাত বাসায় থাকবে। জুন মাসের ২২ তারিখে খবর পেলাম, ঢাকা শহরে শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে ঈদ আনন্দ বঞ্চিত। তাঁদের দুঃখ বেদনার কথা পত্রিকায় পাঠাতে চরম অসুস্থতা নিয়েও বেরোতে হয়েছে। পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমাকে সে ভালোবাসার টানে আটকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।

প্রেমে এতই নিমগ্ন  যে, সে ইত্তেফাক থেকে প্রেমের জালে আটকে পড়ে কত যে মনের গভীরের ভালোবাসা ও প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা উত্তরণে অসংখ্য লেখা লিখেছি। আর্থিক ও শারীরিক অসুস্থতার মাঝেও যেন ভালোবাসায় সুস্থতা বজায় থাকে। প্রেম অহংকার  হয়ে বেঁচে থাকুক সকলের মাঝে। শিক্ষকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, দোয়া হোক আমার জীবনের চলার পাথেয়। প্রেমের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষায় কিছু পরিবর্তনই হোক সকল শিক্ষকদের অঙ্গীকার।

মো:সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036418437957764