শিক্ষার মানোন্নয়নে ৫ প্রকল্পের কার্যক্রমের তদন্ত হচ্ছে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার মানোন্নয়নে ৫ প্রকল্পের কার্যক্রমের তদন্ত হচ্ছে

রাকিব উদ্দিন |

দুর্নীতি, অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার ও অগ্রগতি কম হওয়ায় শিক্ষার মানোন্নয়নের পাঁচটি প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’ (আইএমইডি)। প্রকল্পগুলো হলো- সেসিপ, এসইএসপি, টিকিউআই, জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্প ও এনএএএনডি। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প দাতা সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে দুদক ও আইএমইডি’র পরামর্শের পর সম্প্রতি অভিযুক্ত প্রকল্পগুলোর সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরই পাঁচ প্রকল্পের প্রধানকে (পিডি) চিঠি দেয়া হয়। এর আলোকেই প্রকল্পগুলোর তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশি অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি প্রকল্পের কার্যক্রম তদন্ত করে দেখতে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এগুলোতে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি বা এ সংক্রান্ত কোন দুর্বলতা আছে কিনা কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কোন কাজে গাফিলতি আছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এখন সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সবকটি প্রকল্পকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা রিপোর্ট তৈরি করে আমাদের কাছে জমা দেবেন।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত মাউশি’র সর্বশেষ (গত ১৬ আগস্ট) সভায় সংস্থার মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান পিডিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাকে সামনে রেখে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং বাজেট বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বরাদ্দকে শুধু সমান চার ভাগে ভাগ করে বা সে অনুযায়ী অর্থ ছাড় করলেই হবে না। কোন কোয়াটারে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে সে অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা সম্ভব না হলে প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে।

তিন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি ছিল মোট বরাদ্দের ৯৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। কিন্তু কয়েকটি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি এর অনেক কম, যা সন্তোষজনক নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তারা বলছেন, কেনাকাটায় অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলাদলি, প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের ঘন ঘন দেশ-বিদেশ ভ্রমণ ও দরপত্র আহ্বানে গাফিলতির কারণেই তিনটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হয়েছে।

এর মধ্যে টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট-টু (টিকিউআই) প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতির হার ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অগ্রগতি ৭৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটিটিস (এনএএএনডি)-এর অগ্রগতি সর্বানিম্ন ১৭ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে এনএএএনডি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অত্যন্ত ধীরগতিতে এগুচ্ছে। এ প্রকল্পের কর্মকর্তারা যখন খুশি অফিসে আসছেন, যাচ্ছেন। এই ধরনের একটি ঘটনায় গত ৮ আগস্ট উপপরিচালক শাহনাজ পারভীনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক সালমা বেগম। পরে ৯ আগস্ট শাহনাজ পারভীন কড়া ভাষায় পিডির কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবও দেন। এই প্রকল্পের পিডি প্রকল্পের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নতি করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত মাউশি’র সর্বশেষ সভায় সংস্থার মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান এনএএএনডি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সালমা বেগমকে বলেন, ‘প্রকল্পের কার্যক্রম অধিকতর ত্বরান্বিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে পরামর্শক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।’

তিন কারণে কম অগ্রগতি টিকিউআই প্রকল্পে

টিকিউআই প্রকল্পে গত অর্থবছরে আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ। এর আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ার জন্য তিনটি কারণ শনাক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের সিভিল ওয়ার্কসের (পূর্ত কাজ) নির্ধারিত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারা, কয়েকজন পরামর্শকের রিজাইন দেওয়া (চাকরি ছেড়ে দেয়া) এবং কয়েকটি বড় টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারায় বিগত অর্থবছরের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি বলে এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিন্তু মাউশি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আসলে প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালার আয়োজন ও ছোট ছোট অর্থাৎ ঘুপছি কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকার কারণেই তারা প্রকল্পের বড় কেনাকাটায় মনোনিবেশ করতে পারেননি। ঘুপছি কাজের সঙ্গে অনৈতিক আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে।

বড় প্যাকেজ বাস্তবায়নে পিছিয়ে সেসিপ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণে বিগত অর্থবছরে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট (সেসিপ) প্রকল্প। তারা কীভাবে, কোন কৌশলে অর্থ ব্যয় করছে সে সম্পর্কে মাউশি অধিদফতরের কর্মকর্তারাও সন্তুষ্ট নয়। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সর্বশেষ সভায় মাউশি অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকল্প কর্মকর্তাদের জানতে চান, ‘চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ কীভাবে, কোন কৌশলে ব্যয় হবে।’ এর জবাবে সেসিপ প্রকল্পের প্রতিনিধি জানান, ইতোমধ্যে ১ম কিস্তির অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, যথা সময়ে দরপত্র আহ্বান ও ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভ্রমণে ব্যস্ত থাকার কারণেই বিগত অর্থবছরে সেসিপ প্রকল্পের তিনটি বড় প্যাকেজের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে একটি প্যাকেজে প্রায় ৯৪ কোটি টাকায় দশ হাজার স্কুলে শিক্ষা উপকরণ সরঞ্জামাদি সরবরাহের বিষয়ে এখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত আনতে পারেনি প্রকল্প কর্মকর্তারা। এছাড়া চলমান অর্থবছরের বাস্তবায়নযোগ্য ক্রয় পরিকল্পনাও এখন পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেনি সেসিপ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত দুটি প্রকল্পের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  জানান, তারা চিঠি পেয়েছেন। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রতিবেদন তৈরি হলেই বলা যাবে, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কিনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘প্রকল্পের কেনাকাটা কীভাবে করতে হবে, অর্থ বরাদ্দ কীভাবে ব্যয় করতে হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে প্রকল্প দলিলে (ডিপিপি) বলা রয়েছে। কিন্তু ডিপিপির বাইরে গিয়ে অর্থাৎ বিধিবহিঃভূতভাবে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালে সেটা তো অনুমোদন করা যাবে না। দুঃখজনক হলো- ডিপিপি না পড়েই কোন কোন পিডি প্রকল্পের কেনাকাটা শুরু করেন, যা একপর্যায়ে বাধাগ্রস্ত হয় এবং দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সূত্র: সংবাদ

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067310333251953