গত কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে পাসের হার ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। এ প্লাসপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও সেসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশে যত পাসের হার বাড়ছে তত শিক্ষার মান বাড়ছে না।
বলা হচ্ছে, পাবলিক পরীক্ষায় উদারভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কারণেই শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বর পাচ্ছে এবং পাসের হার বাড়ছে। যে কারণে সব বিষয় ৮০ শতাংশের ওপরে নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে ফেল করছে। তবে উদারভাবে খাতা দেখার অভিযোগ সরকারের দায়িত্বশীল মহল বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। যদি সত্যিকার অর্থে শিক্ষার গুণগত মান না বেড়ে থাকে তবে আমাদের জন্য অত্যধিক এ প্লাস পাওয়ার বিষয়টি আনন্দের পরিবর্তে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। তাই শিক্ষার প্রকৃত মান নির্ণয়ে সরকারের উচিত গবেষণালব্ধ নীতি বাস্তবায়ন করা।
বর্তমানের ফলাফল পদ্ধতির কোনো সংশোধন বা উত্কর্ষ সাধন করা যায় কি না তা বিদগ্ধজন ভেবে দেখতে পারেন। আমাদের দেশে এখন মেধার সর্বোত্তম মূল্যায়ন হচ্ছে ‘এ প্লাস’। যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে যায়, সেখানে প্রকৃত মেধার অধিকারীরা এ ফলাফলে গর্বিত হয় নাকি লজ্জায় মুখ লুকায়, তা ভেবে দেখবার সময় হয়েছে। কারণ যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না। আমাদেরকে অবশ্যই প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। মেধাবীর প্রাপ্য সম্মান ও অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই জাতির উন্নতি। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে গিয়ে আমরা প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন ও সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারছি না। আর তাই গ্রেডিং সিস্টেমের সঙ্গে নম্বর পদ্ধতি যোগ করে নতুন কোনো ফলাফল পদ্ধতি বের করা যায় কি না তা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারেন। একথা ঠিক যে, শিক্ষার সর্বোত্তম মান অর্জনের জন্য সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। খুশির বিষয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের পক্ষে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সৃজনশীল পদ্ধতিকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কারণ আমরা দীর্ঘদিনের প্রচলিত মুখস্থ বিদ্যার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে কি? মুখস্থ বিদ্যাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে গিয়ে পড়াশোনাকেই বিদায় দেওয়া হয়নি তো! কারণ আমরা অহরহ দেখতে পাচ্ছি, যে শিক্ষার্থী পড়াশোনা মোটেই করেনি বা সারা বছর স্কুলে আসেনি, সে-ও এ প্লাস পেয়ে যাচ্ছে। তাই পড়াশোনা ধরে রাখা ও মেধা মূল্যায়নের জন্য আমরা পূর্বের পদ্ধতির সঙ্গে একটু সমন্বয় করে নতুন কোনো পদ্ধতি বের করতে পারি কি না তা ভেবে দেখতে হবে।