শিক্ষা নয়, প্রমোদ ভ্রমণ : জনকন্ঠ সম্পাদকীয় - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা নয়, প্রমোদ ভ্রমণ : জনকন্ঠ সম্পাদকীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন। তবে খবর মিলেছে প্রমোদ ভ্রমণের। ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের নামে থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স বেড়াতে গেছেন ৫০ আমলাশ্রেণীর কর্মকর্তা। এরা প্রায় কেউই শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত নন। শিক্ষা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ কর্মকর্তার সঙ্গে অবশ্য মুষ্টিমেয় বেসরকারী ব্যক্তিও আছেন। তবে তারাও মনোনীত হয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় বরং স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয় তোষণের নীতিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে আরও ৫০ ব্যক্তি শীঘ্রই যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে। এর বাইরেও সেসিপ ও টিকিউআই প্রকল্পের অর্থায়নে এই ধরনের আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রায়ই।

সত্যি বলতে কি, বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত প্রায় সব প্রকল্পেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মর্জিমাফিক বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। আরও যা জানা যায় তা হলো, বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণ, ঘন ঘন কর্মশালার আয়োজনসহ বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি ব্যবহারের সুযোগ না থাকলে প্রায় কোন প্রকল্পই আলোর মুখ দেখে না। তবে প্রশ্ন হলো, ইংরেজী ও গণিতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য থাইল্যান্ড-ফিলিপিন্সের মতো দেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন? উপরোক্ত দুটো বিষয়ে এ দুটো দেশের যে আন্তর্জাতিক তেমন সুখ্যাতি রয়েছে, এমনটা তো বলা যাবে না কিছুতেই। সে অবস্থায় তো একে নিছক প্রমোদ ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা যেতেই পারে।

অবশ্য এ জাতীয় খবরাখবর আদৌ নতুন নয়। কিছুদিন আগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, এই মন্ত্রণালয়ের কোন কাজ নেই। কেননা, মন্ত্রণালয়ের চার ভাগের তিন ভাগ কর্মকর্তা বছরের অধিকাংশ সময় থাকছেন বিদেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা যান অভিজ্ঞতা আহরণ ও তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। মন্ত্রী মহোদয় আরও একটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এ মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হয়েছে বিদেশী অর্থ আহরণের জন্য, কোন কাজ করার জন্য নয়।’ কী সাংঘাতিক কথা!

শিক্ষা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঘটনা দুটো বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। সত্যি বলতে কী, প্রায় সব সরকারী মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বিভাগের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। একেই বলে বুঝি মাথাভারি প্রশাসন। দেশে গত কয়েক বছর ধরে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা ও নাজেহাল। ইংরেজী এবং গণিত বিষয়েও উপযুক্ত শিক্ষকের ঘাটতি আছে। যে কারণে গত কয়েক বছরে শিক্ষার সার্বিক মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জিপিএ-৫ হয়ত অনেকেই পাচ্ছে, তবে তাদেরও সাধারণ শিক্ষার মানে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় ও হচ্ছে। দেশে যখন সৃজনশীল শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হয় তখনই ভাবা উচিত ছিল, এ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে অভ্যস্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া যাবে কিনা! যথেষ্ট পরিমাণে ভাল প্রশিক্ষিত শিক্ষকের এমনিতেই অভাব; সৃজনশীল তো দূরের কথা! অথচ রাতারাতি সেটি চাপিয়ে দেয়া হলো শিক্ষার্থীদের ওপর। এর ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। যে পদ্ধতিটি শিক্ষকরাই বোঝেন না, সেটি শিক্ষার্থীরা বুঝবে, এমনটি আশা করা বাতুলতা। ফলে দেশব্যাপী রাতারাতি সৃজনশীল শিক্ষার নামে গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার এবং গাইড বইয়ের অবৈধ ব্যবসা। অভিভাবকদের ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসেছে বাড়তি ব্যয়ের চাপ। শিক্ষার মানোন্নয়ন দূরের কথা বরং লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্রমাবনতি। গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে শিক্ষা নিয়ে যে তুঘলকী কা-কারখানা চলছে, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের।

জ্ঞান অর্জন এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা কেউই অস্বীকার করবেন না। তবে সেজন্য উপযুক্ত দেশে উপযুক্ত লোককে পাঠাতে হবে। দেশে যেহেতু এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতি ও কারিকুলাম প্রচলিত সেহেতু গণিত কিংবা ইংরেজী শিক্ষার নিমিত্ত যুক্তরাজ্যই আমাদের আদর্শ স্থান। থাইল্যান্ড কিংবা ফিলিপিন্স নয়। আবার আমলারাও এর জন্য উপযুক্ত নন। বরং অভিজ্ঞ ও মানসম্পন্ন শিক্ষকদেরই বিদেশে পাঠানো উচিত উচ্চতর প্রশিক্ষণের নিমিত্ত। তাহলে তারা দেশে ফিরে অন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন এবং তাতে উপকৃত হতে পারে শিক্ষার্থীরাও। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় তো বিনিময়ের জন্যই। দুঃখজনক হলো যেসব আমলা শিক্ষার পরিবর্তে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য বিদেশে যান, তারা ফিরে এসে কোন প্রতিবেদন দেয়ারও তাগিদ অনুভব করেন না। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা বাঞ্ছনীয়। সরকারী অর্থ বা অনুদানের টাকার নয়ছয় কাম্য নয়।

সূত্র : দৈনিক জনকন্ঠ, ১৪ জুন, ২০১৬।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0090060234069824