রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কিছু স্কুল-কলেজে তল্লাশির পর আগতদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর সতর্কতা হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর নগরজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনা করে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার কোনো হুমকি নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অভিজাত এলাকার নামি স্কুল-কলেজ এবং বিদেশি ও আদিবাসীরা পড়েন এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ফটকে বা সামনের রাস্তায়
পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্য সব প্রতিষ্ঠানের সামনে আলাদাভাবে পুলিশ না থাকলেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্কুল-কলেজে ঢোকার সময় তল্লাশি করার কথা বলা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে।
এ বিষয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম সালেহীন বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পুলিশের পরামর্শ নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় নজরদারির ব্যবস্থা আগে থেকেই ছিল। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য তাদের তথ্যভাণ্ডার তৈরিসহ অন্যান্য দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। স্কুলটিতে ২২ জনের একটি নিরাপত্তারক্ষী দল রয়েছে। এ ছাড়া সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশের সময় ক্ষেত্রবিশেষে তল্লাশিও করা হচ্ছে।
বিয়াম মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহানা হক বলেন, জঙ্গি ও নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি কিছু বললে শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। সে জন্য যথাসম্ভব সতর্কতা বজায় রেখে এ বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেন অপরিচিত কারও সঙ্গে স্কুলের বাইরে কথা না বলে সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সচেতন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়ানো ঠেকাতে ক্লাসে অনুপস্থিতির বিষয়টি নজরদারিতে রাখতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশ মেনে অনিয়মিত ছাত্রীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানীর ইডেন কলেজ। ওই যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে সব শিক্ষার্থীকে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২২টি বিভাগের সামনের দরজায় ওই যন্ত্র বসানোর কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া কলেজে আগে থেকেই ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। কলেজের প্রধান ফটকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে। কলেজের ৩২ হাজার ছাত্রীর মধ্যে ১৮ হাজার ছাত্রীর ঠিকানা এরই মধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।