মো. নাসির উদ্দিন নামের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত এক কর্মচারী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পথে তিনি ‘নিখোঁজ’ হন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের ভায়রা নাইম আহমেদ জুলহাস সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিখোঁজের ঘটনায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-১২১৮) করা হয়।
কয়েকবছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি প্রকল্পে পিওন পদে তিনি চাকরি নেন নাসির। কয়েকবছরের মধ্যে কোটিপতি বনে যান তিনি।২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে একাধিক টেলিভিশন ও পত্রিকায় তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়। এরপরই একট সমিতি বানিয়ে ওই সমিতির নেতা বনে যান। দুই মাস আগে থেকে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী কর্মচারী হিসেবে সংযুক্ত হন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জনুয়ারি) বিকেল ৩ টার দিকে বনানী থেকে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পথে তিনি ‘নিখোঁজ’ হন বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, একজন কর্মচারি হয়েও একাধিক গাড়ী-বাড়ীর মালিক তিনি। দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শত শত এমপিও জালিয়াতি করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়। এরপর দুদক তদন্ত শুরু করে। ওই সময় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে সভা-সমিতি করায় ব্যস্ত ছিলেন। গত দুই মাস আগে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবার সংযুক্তি হিসেবে বদলি হন। এতে শিক্ষা প্রশাসনের প্রায় সবাই হতবাক হন।
নাইম আহমেদ জুলহাস সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বনভোজনের বিষয়ে বনানীতে কাজে এসেছিলেন নাসির উদ্দিন। পরে দুপুরে মন্ত্রণালয়ে ফেরার সময় আনুমানিক ৩টার দিকে তার স্ত্রীর সঙ্গে একবার কথা হয়। এরপর থেকে তার দু’টি মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। সে অফিসেও যায়নি, বাসায়ও ফিরে আসেনি।
পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানী থানায় নাসির উদ্দিন নিখোঁজ মর্মে একটি জিডি করা হয়, বলেন নাইম আহমেদ জুলহাস।
এবিষয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার খিলক্ষেতের বাসা থেকে বের হয়ে বনানীতে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে অফিসে যাওয়ার কথা ছিলো নাসির উদ্দিনের। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
নিখোঁজ নাসির উদ্দিনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, ক্যামব্রিয়ানসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা মাফিয়া চক্রের সঙ্গে যুক্ত নাসির।এই চক্রটি জিপিএ ফাইভ কেনা-বেচা, নতুন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের এমপিওভুক্তি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি, সমাবর্তনের অনুমতিসহ বিভিন্ন কাজ টাকার বিনিময়ে করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরা বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে আদম ব্যবসা করে মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। সম্প্রতি এই চক্রটি শ্রীলঙ্কায় আদম পাঠানোর রেকি কয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে মন্ত্রীর পিএ মোতালেব হাওলাদারসহ কয়েকজন জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।