প্রতি বত্সর শীত মওসুমে শিক্ষা সফর বা বনভোজনের আয়োজন দেখা যায়। ইহা শিক্ষার সহিত সংযুক্ত বটে। সুতরাং উত্সবের আমেজে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হইতে শিক্ষার্থীরা যখন দেশের বিশেষ দর্শনীয় স্থানে দল বাঁধিয়া সফরে যায়, তখন কখনো-সখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করা হইয়া থাকে। আর তাহা হইল, শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি এবং তাহার চালক। গাড়ির চালক যদি যথাযথভাবে দক্ষ কিংবা পারদর্শী না হয়, তাহা হইলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটিতে পারে, শিক্ষা সফর তখন মর্মান্তিক সফরের পরিণতি লাভ করে। আমরা দেখিতে পাই, প্রায় প্রতি বত্সরই শিক্ষা সফরকালে কিছু গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। ইহাতে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটিয়া থাকে। এই বত্সরেও যথারীতি শীত শুরু হইবার পর শিক্ষা সফরের কার্যক্রম শুরু হইয়া গিয়াছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হইলেও সত্য যে, অতীতের মতো এই বত্সরটিও দুর্ঘটনামুক্ত নহে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, সম্প্রতি পিরোজপুরের কাউখালিতে একটি শিক্ষা সফরের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া দুর্ঘটনায় পড়ে। এই ঘটনায় ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন, যাহার মধ্যে ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, বিষয়টি উদ্বেগজনক। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্যেই মূলত অদক্ষ চালক, সড়কের বেহাল দশা এবং যান্ত্রিক ত্রুটি—এই তিনটি সমস্যাই প্রধান অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। এই ক্ষেত্রেও তাহার ব্যত্যয় ঘটে নাই। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রের মতো এই ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষিত বা পারদর্শী চালকের অভাবই প্রকট হইয়া দেখা দিয়াছে। বিভিন্ন জরিপেও এই তথ্য উঠিয়া আসিয়াছে যে, চালকের অদক্ষতা, ঘন ঘন ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা এবং বেপরোয়া গতির ফলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাগুলি ঘটিয়া থাকে। সবচাইতে উদ্বেগের বিষয় হইল—অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা সফরের সময় নিয়মিত চালকের পরিবর্তে অনিয়মিত বা অপারদর্শী কোনো চালক গাড়িটি চালান। অনেক ক্ষেত্রে হেলপাররাই এইখানে চালকের আসনে বসিয়া যায়। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি বা অবকাঠামোগত সমস্যাতো আছেই। তাহা ছাড়াও শীতকালীন সময়ে কুয়াশাজনিত সমস্যাটিও অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হইয়া দাঁড়ায়।
এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলেরই আরো সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়া আবশ্যক। বিশেষ করিয়া গাড়ি ভাড়া করিবার সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের অবশ্যই দক্ষ ও বৈধ চালকের বিষয়টি নিশ্চিত করিতে হইবে। প্রত্যেকটি সফরে যদি দক্ষ চালক, পরিমিত গতি এবং গাড়ির ফিটনেসের মতো মূল বিষয়গুলি নিশ্চিত করা যায় তাহা হইলে আশা করা যায় যে, এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাইবে। সর্বোপরি শিক্ষা সফর বা বনভোজনের আনন্দ লইয়া সবার ঘরে ফিরিয়া আসাটা সব দিক দিয়া নিশ্চিত করিতে হইবে।
সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক