শিক্ষিত মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে সংকীর্ণতা: ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষিত মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে সংকীর্ণতা: ড. জাফর ইকবাল

মুহম্মদ জাফর ইকবাল |

একটি দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার উপায় কী? জ্ঞানী-গুণী মানুষদের নিশ্চয়ই এটা বের করার নানা উপায় আছে। তাঁরা অর্থনীতির দিকে তাকাবেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিবেচনা করবেন, দুর্নীতির পরিমাপ করবেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যাচাই করবেন এবং আরো অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে একটা রায় দেবেন।

আসলে দেশ কেমন চলছে সেটা বের করা খুবই সহজ। দেশের একজন সংখ্যালঘু মানুষকে নিরিবিলি জিজ্ঞেস করবেন, ‘দেশটি কেমন চলছে?’ সেই সংখ্যালঘু মানুষটি যদি বলে, ‘দেশ ভালো চলছে’, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি ভালো চলছে। আর সেই মানুষটি যদি ম্লান মুখে মাথা নেড়ে বলে, ‘দেশটি ভালো চলছে না’, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি আসলেই ভালো চলছে না। দেশে ১০টি পদ্মা সেতু, এক ডজন স্যাটেলাইট আর ১০ হাজার ডলার পার ক্যাপিটা আয় হলেও যদি সংখ্যালঘু মানুষটি বলে দেশ ভালো নেই, তাহলে বুঝতে হবে আসলেই দেশ ভালো নেই (সংখ্যালঘু শব্দটি লিখতে আমার খুব সংকোচ হয়, সবাই একই দেশের মানুষ; এর মধ্যে কেউ কেউ সংখ্যাগুরু, কেউ কেউ সংখ্যালঘু—সেটা আবার কেমন কথা? কিন্তু আমি যে কথাটি বলতে চাইছি, সেটা বোঝানোর জন্য শব্দটি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় ছিল না)।

এখন যদি আমরা এ দেশের একজন হিন্দু, সাঁওতাল বা পাহাড়ি মানুষকে জিজ্ঞেস করি দেশ কেমন চলছে, তারা কী বলবে? নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবাইকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল। গাইবান্ধায় পুলিশ সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে, পত্রপত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছে। সর্বশেষ হচ্ছে রাঙামাটিতে লংগদুর ঘটনা, পাহাড়ি মানুষদের বাড়ি জ্বালিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য যে মা তার সন্তানদের বুকে চেপে ধরে মাইলের পর মাইল পাহাড় অতিক্রম করে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল, বৃষ্টিতে ভিজেছে, রৌদ্রে পুড়েছে, অভুক্ত থেকে মশার কামড় খেয়ে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে চমকে চমকে উঠেছে, আমি যদি তাকে বলি, বাংলাদেশ অনেক বড় সম্ভাবনার দেশ, এবারে উন্নয়নের বাজেটই হয়েছে চার লাখ কোটি টাকার, পদ্মা সেতুর ৪০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে, আগামী মাসে আমাদের নিজস্ব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হবে—সেই অসহায় মা কি আমার কথা শুনে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে না? তাকে কি আমি কোনোভাবে বোঝাতে পারব, আমাদের অনেক কষ্ট করে, যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে পাওয়া দেশটি স্বপ্নের একটি দেশ? আমি তাকে কিংবা তার মতো অসংখ্য পাহাড়ি মানুষকে সেটা বোঝাতে পারব না। তাদের কাছে এ দেশ হচ্ছে একটি বিভীষিকা, যেখানে প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষ এসে পুরোপুরি নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তাদের রক্ষা করার কেউ নেই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে এ ঘটনাগুলো ঘটতে দেয়। এ ঘটনা ঘটবে সেটা সবাই আঁচ করতে পারে, তার পরও কেউ সেটা থামানোর চেষ্টা করে না। আমি নিজেকে এই পাহাড়ি মানুষদের জায়গায় বসিয়ে পুরো বিষয়টি কল্পনা করে আতঙ্কে শিউরে উঠেছি।

পৃথিবীতে অন্যায় কিংবা অপরাধ হয় না, তা নয়। আমরা প্রতি মুহূর্তেই আমাদের চারপাশে এগুলো দেখছি। কিন্তু লংগদুর ঘটনাটা ভিন্ন। যুবলীগের একজন কর্মীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কে মেরেছে ঠিকভাবে জানা নেই, প্রচার করা হলো দুজন চাকমা তরুণ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো পুরোপুরি নির্দোষ কিছু পাহাড়ি গ্রামবাসীকে। একজন-দুজন ক্রুদ্ধ মানুষ নয়, হাজার হাজার সংগঠিত মানুষ পেট্রলের টিন আর ট্রাক্টর নিয়ে হাজির হলো। পেট্রল দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, ট্রাক্টর ব্যবহার করা হলো লুট করা মালপত্র বোঝাই করে নেওয়ার জন্য। বিচ্ছিন্ন একজন কিংবা দুজন মানুষ বাড়াবাড়ি কিছু একটা করে ফেলছে সেটা বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কয়েক হাজার মানুষ মিলে একটি ভয়ংকর অন্যায় করার জন্য একত্র হয়েছে—সেটা আমরা বিশ্বাস করি কেমন করে?

কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, কারণ আমরা বারবার এ ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমরা কেমন করে এত হৃদয়হীন হয়ে গেলাম?

২.

আমরা জানি কিছুদিন আগেও আমাদের ছেলে-মেয়েদের পাঠ্য বইয়ে আদিবাসী মানুষদের সম্পর্কে অনেক ধরনের অসম্মানজনক কথা লেখা থাকত। সচেতন মানুষ একটি একটি করে বিষয়গুলো সবার চোখের সামনে এনেছেন, তখন সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন তো আমরা করতেই পারি, এ পাঠ্য বইগুলো তো হেজিপেজি, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, রুচিহীন, বুদ্ধিহীন মানুষরা লেখে না। এ বইগুলো লেখেন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাবিদরা, লেখা শেষ হওয়ার পর সম্পাদনা করেন আরো গুরুত্বপূর্ণ মানুষরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। তাহলে পাঠ্য বইগুলোতে এ রকম অবিশ্বাস্য সাম্প্রদায়িক কথা কেমন করে লেখা হয়, কেমন করে আদিবাসী মানুষদের এত অসম্মান করা হয়?

কারণটা আমরা অনুমান করতে পারি। আমরা যাঁদের বড় বড় শিক্ষিত মানুষ হিসেবে ধরে নিয়েছি তাঁদের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে সংকীর্ণতা। যাঁরা আমার মতো নন, তাঁরা অন্য রকম, আর অন্য রকম মানেই অগ্রহণযোগ্য। অন্য রকম মানেই খারাপ, অন্য রকম মানেই নাক সিটকে তাকানো।

অথচ পুরো ব্যাপারটাই আসলে ঠিক তার বিপরীত। সারা জীবনে আমি যদি একটি বিষয়ই শিখে থাকি, তাহলে সেটা হচ্ছে একটি উপলব্ধি যে ‘বৈচিত্র্যই হচ্ছে সৌন্দর্য’। কোনো মানুষ কিংবা সম্প্রদায় যদি অন্য রকম হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হচ্ছে বৈচিত্র্য এবং সেই বৈচিত্র্যটুকুই সৌন্দর্য।

পৃথিবীতে অনেক সৌভাগ্যবান দেশ রয়েছে, যেখানে অনেক দেশের অনেক মানুষ পাশাপাশি থাকে। তারা দেখতে ভিন্ন, তাদের মুখের ভাষা ভিন্ন, তাদের কালচার ভিন্ন, ধর্ম ভিন্ন, খাবার কিংবা পোশাক ভিন্ন। আমরা সেদিক থেকে অনেক দুর্ভাগা, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সেই বৈচিত্র্য নেই। ঘর থেকে বের হয়ে আমরা যেদিকেই তাকাই সেদিকেই একই রকম মানুষ দেখতে পাই, তাদের মুখের ভাষা, চেহারা, পোশাক—কোনো কিছুতেই পার্থক্য নেই। আমাদের দেশের একটুখানি ভিন্ন ধরনের মানুষ হচ্ছে সাঁওতাল কিংবা গারো মানুষ, পাহাড়ি মানুষ। এ মানুষগুলোকে আমাদের বুক আগলে রাখার কথা, অথচ আমরা তাদের অবহেলা করি!

আমাদের পরের প্রজন্মকে শেখাতে হবে পৃথিবীর সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্যে। সারা পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হচ্ছে ‘ডাইভারসিটি’। একটি দেশে যত বেশি ডাইভারসিটি সেই দেশটি তত সম্ভাবনাময়। নতুন পৃথিবী আধুনিক পৃথিবী। আধুনিক পৃথিবীর মানুষ একে অন্যের সঙ্গে বিভেদ করে না। শুধু যে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে না তা নয়, গাছ, ফুল, পশু-পাখি সবাই মিলে যে একটি বড় পৃথিবী ও সবার যে পাশাপাশি বেঁচে থাকার অধিকার আছে সেটাও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।

অথচ আমরা সবিস্ময়ে দেখতে পাই, একজন-দুজন নয়, কয়েক হাজার মানুষ মারমুখী হয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কী তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধ সেই মানুষগুলো আমাদের থেকে একটু ভিন্ন।

৩.

আমার শৈশবটি কেটেছে বাংলাদেশের নানা এলাকায়। বাবা পুলিশের অফিসার হিসেবে দু-তিন বছর পর নতুন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। সেই সুযোগে আমরা রাঙামাটি আর বান্দরবান এ দুই জায়গায়ও ছিলাম। বান্দরবানে আমি স্কুলে পড়েছি, আমাদের ক্লাসে বাঙালি ছেলে-মেয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি ছেলে-মেয়েরাও ছিল। তাদের অনেকে ভালো বাংলা বলতে পারত না, এখন অনুমান করি সে কারণে লেখাপড়াটা নিশ্চয়ই তাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ক্লাসের ভেতরে লেখাপড়াটা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না, ক্লাস ছুটির পর বন-জঙ্গলে, পাহাড়ে-নদীতে ঘুরে বেড়ানোতে আমাদের আগ্রহ ছিল বেশি। তাই ভালো বাংলা না জানলেও সেটা কোনো সমস্যা হতো না। ধর্ম, ভাষা, গায়ের রং, শরীরের গঠন কিংবা কালচার ভিন্ন হলেও সব মানুষ যে একেবারে একই রকম, সেটা আমি শিখেছি নিজের অভিজ্ঞতায়।

বান্দরবানের সেই স্কুলে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ শিক্ষক পেয়েছিলাম, যাঁর কথা আমি কখনো ভুলিনি। আমি আমার নিজের শিক্ষকজীবনে তাঁর শেখানো বিষয়গুলো এখনো ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং এখনো ম্যাজিকের মতো ফল পাচ্ছি।

আমাদের এই শিক্ষক ছিলেন একজন পাহাড়ি (সম্ভবত মারমা) মহিলা। পাহাড়ি পোশাকে ক্লাসে আসতেন। একজন মানুষকে বিচার করতে হলে কখনো তার চেহারা নিয়ে কথা বলতে হয় না; কিন্তু অসৌজন্যমূলক হলেও আমাকে একটুখানি বলতে হচ্ছে—মধ্যবয়স্ক এ মহিলার গলগণ্ড রোগ ছিল বলে তাঁকে কোনো হিসেবে সুন্দরী বা আকর্ষণীয় বলার উপায় নেই। ভদ্রমহিলা এক-দুটির বেশি বাংলা শব্দ জানতেন না। তিনি আমাদের ড্রয়িং টিচার ছিলেন; কিন্তু ছবি আঁকতে পারতেন না, কোনো দিন চক হাতে বোর্ডে কিছু আঁকার চেষ্টা করেননি। কিন্তু তার পরও আমাদের ড্রয়িং ক্লাস নিতে কখনো তাঁর কোনো অসুবিধা হতো না।

ক্লাসে এসে তিনি বলতেন, ‘লাউ আঁকো’ কিংবা ‘বেগুন আঁকো’। এর বেশি কোনো কিছু বলেছেন বলে মনে পড়ে না।

আমরা তখন লাউ কিংবা বেগুন আঁকতাম, আমাদের সবারই স্লেট-পেনসিল ছিল, যাবতীয় শিল্পকর্ম সেখানেই করা হতো। ছেলে-মেয়েরা লাউ কিংবা বেগুন এঁকে আমাদের ড্রয়িং টিচারের কাছে নিয়ে যেত। লাউ ও বেগুনের আকার-আকৃতি দেখে তিনি বিভিন্ন মাত্রার উল্লাস প্রকাশ করতেন এবং চক দিয়ে স্লেটের কোনায় মার্ক দিতেন। কেউ চার, কেউ পাঁচ, কেউ ছয় কিংবা সাত। আমার ছবি আঁকার হাত ভালো ছিল। তাই আমার লাউ কিংবা বেগুন দেখে তিনি উল্লসিত হয়ে ১০ দিয়ে দিলেন।

ড্রয়িং ক্লাস হতে লাগল, তিনি আমাদের শিল্পকর্মে নম্বর দিতে লাগলেন এবং আমরা আবিষ্কার করলাম, তাঁর দেওয়া নম্বরও বাড়তে শুরু করেছে। দশের বাধা অতিক্রম করে কেউ ১৫, কেউ ১৭ পেতে লাগল। কতর ভেতর ১৫ কিংবা ১৭, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন ছিল না। হয়তো প্রজাপতি আঁকতে দিয়েছেন, কেউ প্রজাপতি এঁকে নিয়ে গেছে এবং তাকে ২২ দিয়েছেন। পরের জনের প্রজাপতি হয়তো আরো সুন্দর হয়েছে তাকে ৩০ দিলেন। এর পরের জন হয়তো পুরো ৪০ পেয়ে গেল!

আমরা সব ক্লাসেই লেখাপড়া করে আসছি; কোথাও এ রকম নম্বর পাইনি, একটা কলা এঁকে যখন ৯০ পেয়ে যাই তখন মনে হয় রাজ্য জয় করে ফেলেছি!

কাজেই আমাদের এ ড্রয়িং ক্লাসটা ছিল আনন্দময় একটা সময়। লাউ, কলা, প্রজাপতি শেষ করে তখন আমরা পশু-পাখি আঁকতে শুরু করলাম। শুধু একটি গরু এঁকে একদিন আমি ৮৫০ পেয়ে গেলাম—আনন্দে-উত্তেজনায় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমাদের ড্রয়িং টিচার তত দিনে বুঝে গেছেন, আমি ভালো আঁকতে পারি এবং সে জন্য আমার প্রতি তাঁর এক ধরনের স্নেহ ছিল। প্রায় নিয়মিতভাবে আমি ক্লাসে সব সময় সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে আসছি।

একদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘বুডডিশ আঁকো’, শব্দটি আমি বুঝতে পারিনি, তখন অন্যরা বুঝিয়ে দিল। ড্রয়িং টিচার বুদ্ধমূর্তি আঁকতে বলেছেন। আমি তখন বিপদে পড়ে গেলাম। বান্দরবানের ক্যাংঘরে নানা রকম বুদ্ধমূর্তি দেখে এসেছি; কিন্তু তার ছবি আঁকার মতো খুঁটিনাটি লক্ষ করিনি। আমাদের ক্লাসে আরো একজন মারমা ছেলে ভালো ছবি আঁকত, সে অসাধারণ একটি বুদ্ধমূর্তি এঁকে নিয়ে গেল এবং ড্রয়িং টিচার তাকে ১৪০০ নম্বর দিয়ে দিলেন—আমি বসে বসে মাথা চুলকে যাচ্ছি। আমার ড্রয়িং টিচারের তখন আমার জন্য মায়া হলো। মারমা ছেলেটির স্লেটটি আমার সামনে রেখে সেটা দেখে দেখে আঁকতে বললেন। আমি সেটা দেখে দেখে একটি বুদ্ধমূর্তি আঁকলাম এবং আমিও ১৪০০ পেয়ে গেলাম!

এরপর এত বছর পার হয়ে গেছে আমি আমার এই ড্রয়িং টিচারের কথা ভুলিনি—তিনি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি দিয়ে গেছেন। সেটা হচ্ছে ছেলে-মেয়েদের উৎসাহ দিতে হয়। আমিও আমার সারাটি জীবন ছেলে-মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে আসার চেষ্টা করে আসছি এবং দেখে আসছি এটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

এই মারমা ড্রয়িং টিচারের মতো নিশ্চয়ই একজন সাঁওতাল বৃদ্ধ কিংবা গারো যুবক রয়েছে, যার কাছ থেকে আমার জীবনের কোনো একটি শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল—আমরা সেটা পাইনি। আমরা মানুষে মানুষে বিভাজন করে নিজেদের ভাষা-ধর্ম-কালচার নিয়ে অহংকার করে অন্যদের তাচ্ছিল্য করতে শিখিয়েছি। অবহেলা করতে শিখিয়েছি। আমরা যদি আধুনিক পৃথিবীর আধুনিক মানুষ হতে চাই, তাহলে সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে।

৪.

হয়তো বাংলাদেশ কিছুদিনের মধ্যে অনেক উন্নত হয়ে যাবে। আমাদের মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে যাবে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের প্রশ্ন ফাঁস হবে না, স্কুলে আনন্দময় পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করবে। নিজেদের অর্থে আমরা বিশাল বিশাল পদ্মা সেতু তৈরি করব। কিন্তু যদি একটি পাহাড়ি শিশু তার মায়ের হাত ধরে আতঙ্কে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য জঙ্গলে ছুটে যেতে থাকে, তাহলে কি আমাদের সব উন্নয়ন পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যাবে না?

দেশের একটি নাগরিককেও যদি আমরা সম্মান নিয়ে শান্তিতে নিজের ঘরে ঘুমানোর পরিবেশ তৈরি করে দিতে না পারি, তাহলে বিশাল পদ্মা সেতু দিয়ে কী হবে?

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044639110565186