‘শুভংকরের ফাঁকি’ চান না এমপিও শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

‘শুভংকরের ফাঁকি’ চান না এমপিও শিক্ষকরা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
Mujammel Ali
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী

দেশের লাখ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আজ তাঁদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাঁদের অধিকার সমূহ একান্ত কেবল তাঁদেরই অধিকার নয়, এর সাথে গোটা জাতির স্বার্থ জড়িত। কেননা, দেশের ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করে তাঁরা জাতি গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশ আজ যেটুকু এগিয়েছে, তার পেছনে এসব শিক্ষকের অবদান সর্বাধিক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে তাঁরা দিনান্ত কাজ করেন। কিন্তু কেন জানি, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতি আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের এতো অবহেলা? এর কারণ খুঁজে পায় না কেউ।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের সমস্যা অনেক। নিত্যদিন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীগণ যেমন নানা সমস্যায় জর্জরিত, তেমনি এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ও সমস্যার অন্ত নেই। এসব সমস্যা দেখার কেউ নেই যেন। এ সমস্যা গুলোর আবর্তে প্রতিদিন ঘোরপাক খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ঘোরপাকে আমাদের জাতির কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে-তা আজ না হলে ও অন্য আরেকদিন আমাদের হাড়ে হাড়ে টের পেতেই হবে।

এ ক’বছরে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে ছাত্রীর সংখ্যা অতীতের যেকোন সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। ঝরে পড়ার হার ও অনেক কমেছে। এসব সূচকে আমরা আমাদের প্রতিবেশী ভারতসহ আরো অনেককে পেছনে ফেলে এসেছি। সারা দেশের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যয়ন করে থাকে। কিন্তু, এ সকল প্রতিষ্ঠানে নতুন শ্রেণি কক্ষ নির্মাণ কিংবা নতুন আসবাবপত্র সরবরাহে সরকারি উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যায় না। দেশে এ জাতীয় এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বিগত দশ বছরেও নতুন কোন ভবন কিংবা আসবাবপত্রের কোন বরাদ্দ পায়নি। এসব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগণ কোথায় বসে লেখাপড়া করবে?

সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকার এ খাতে বছরে কোটি টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ দিলে ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতি কারো নজর নেই। অবশ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের এসব বরাদ্দের বেশীরভাগই রাঘব বোয়ালরা খেয়ে ফেলে। সে আরেক কথা।

সরকারি স্কুল-কলেজে ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিংবডি’র তেমন বালাই নেই। কিন্তু এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে এসব না হলে যেন চলে না । ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিং বডি গঠনে কত কাঠ খড় যে পোড়াতে হয় ! ক্ষেত্র বিশেষে এরা যে কতো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করে-সে কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন ।

শিক্ষক নিয়োগের কাজটা এনটিআরসি’র হাতে চলে যাওয়ায় ভাল কী মন্দ হলো সে পরে বোঝা যাবে। তবে, এতোদিন শিক্ষক নিয়োগ আর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করানো আল্লাহর জমিনে যেন একটা কঠিন কাজ ছিল। সরকার তাদের হাতে নিয়োগ নিয়েছে তো ভাল করেছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠান যাদের নিয়োগ দিলো সেই সব সৃষ্ঠপদের ও আইসিটি শিক্ষকদের আজো এমপিওভুক্ত করা হলো না।

সরকার তাদের হাতে নিয়োগ নেবার আগেই এসব শিক্ষকদের এমপিও দিয়ে দেয়া উচিত ছিল। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, অথচ এখানে কেউ পায় কেউ পায় না-তা কী করে হয়? এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ চালু করবার আগেই ২০১১ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখের কালো প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে সৃষ্ঠপদের ও আইসিটি’র সকল শিক্ষকের এমপিও একসাথে দিয়ে দেয়াটা খুবই সমীচিন হবে। শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে সরকার অবিলম্বে কাজটি করলে সমগ্র জাতির উপকার হয় ।

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের বিষয়ে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ আজ প্রতিবাদ মূখর হয়ে উঠেছেন । তাঁদের প্রতিবাদের হেতুটি অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। তাদের প্রতি নতুন বেতন স্কেল প্রদানের ক্ষেত্রে যে অবিচারটি করা হচ্ছে, তা প্রকারান্তরে শিক্ষাকে অবহেলা বৈ কিছু নয়। পে-স্কেল বিষয়ে একটার পর একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত তাঁদের ক্ষোভ ও দুঃখ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এমপিও শিক্ষকগণ মার্চের বেতন নতুন স্কেলে পাচ্ছেন মর্মে খবর বেরিয়েছে। সরকারি আদেশ (জিও) না হওয়া পর্যন্ত এ খবরটির সত্যতাই বা কতটুকু? এর ওপর জুন মাসে একসাথে ৯ মাসের বকেয়া দেবার কথা ও শুনা যাচ্ছে। আসলে, গাভী মরার পর হাওরে ঘাস জন্মালে লাভ কী হবে? এমপিও শিক্ষকদের নিয়ে আর কত শুভংকরের ফাঁকি?

বকেয়াটা আগে দেয়ার দাবী সকলের। এক সাথে না পারলে অন্তত তিন-চার মাসের বকেয়াটা নতুন স্কেলের সাথেই দিন। বাকীটা না হয় পরের এমপিওতে দিবেন। অন্যথায় বকেয়া পরিশোধের জন্য আবার যে এক মহা নাটক শুরু হবে, তাতে সন্দেহ নেই ।

আমেরিকায় শিক্ষকরা ভি.আই.পি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়ে থাকেন, ফ্রান্সের আদালতে কেবল শিক্ষকগণই চেয়ারে বসতে পারেন আর জাপানে কোন কারণে একজন শিক্ষককে গ্রেফতার করা আবশ্যক হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর আমাদের দেশে? স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ও এ দেশে শিক্ষকদের নিজেদের মর্যাদাটুকু প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে এমপিও তথা বেসরকারি শিক্ষকদের উপহাস করার জন্য সরকারে থেকে একটি শ্রেণি উঠে পড়ে লেগেছে। অষ্টম পে-স্কেলে এমপিও শিক্ষকদের জন্য যতো শুভংকরের ফাঁকি-তা কি এর সত্যতা বহন করে না?

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00388503074646