শূন্য পদে নিয়োগ পেয়েও বেতন পাচ্ছেন না ৮ হাজার শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

শূন্য পদে নিয়োগ পেয়েও বেতন পাচ্ছেন না ৮ হাজার শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকার অনুমোদিত বিধি-বিধান ও যোগ্যতা অনুযায়ী শূন্য পদে নিয়োগ পেয়েও দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের প্রায় আট হাজার শিক্ষক এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ তাদের সহকর্মী শিক্ষকদের সবাই এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) পাচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এ বৈষম্যের কারণে শিক্ষার মৌলিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, মূলত শিক্ষা প্রশাসনের ভ্রান্তনীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের একাংশকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের অবহেলিত ও অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।

এমপিও সুবিধা না পাওয়া দু’জন শিক্ষক বলেন, ‘আমরা পত্রিকায় দেয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত হই, যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশি’সহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সবার কাছে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় আমরা নিয়োগ পেয়েছি। আমরা অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি। এখন এমপিও পেতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে কেন?’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশে এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় (হাইস্কুল) এবং কলেজ রয়েছে মোট ১৮ হাজার ৫৬৩টি। এর মধ্যে হাইস্কুল ১৬ হাজার ১৯৮টি এবং কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি।

আবার বেসরকারি কলেজের মধ্যে ইন্টারমেডিয়েট ও ডিগ্রি (পাস) কোর্সের পাশাপাশি অনার্স-মাস্টার্স পাঠদান চালু রয়েছে ৫১৬টিতে। কিন্তু গত দু’তিন বছরে এসব কলেজের ২৮৫টিকে জাতীয়করণ করেছে সরকার।

বাকি ২৩১টি এমপিওভুক্ত কলেজে বর্তমানে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে, যেগুলোতে প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব কলেজে যেসব শিক্ষক ইন্টারমেডিয়েট ও ডিগ্রিতে পড়ান তারা নিয়মিত এমপিও বা সরকার থেকে বেতনভাতা পান। কিন্তু যেসব শিক্ষক অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে পাঠদান করেন তারা সরকার থেকে কোন বেতনভাতা বা এমপিও পাচ্ছেন না। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা ও অনুমোদন নিয়েই এমপিওভুক্ত কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা হয়, শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশের ২৩১টি অনার্স-মাস্টার্স কলেজে এমপিও বঞ্চিত শিক্ষক আছেন প্রায় পাঁচ হাজার। আর ১৬ হাজার ১৯৮টি হাইস্কুলের সবক’টিতেই আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিষয় চালু রয়েছে। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় এসব স্কুলেও প্রায় সাড়ে ১৩শ’ শিক্ষক এমপিও বঞ্চিত আছেন। এছাড়াও মাধ্যমিক স্তরে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক আছেন দুই শতাধিক, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ পেলেও বেতনভাতা থেকে বঞ্চিত।

ভ্রান্তনীতির কবলে অনার্স-মাস্টার্স

১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৩-৯৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ পর্যায়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী ইন্টারমিডিয়েট একজন এবং ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রতি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষক (মোট ২ জন) এমপিওভুক্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়মানুযায়ী, অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করতে প্রতি বিষয়ের জন্য কলেজে কমপক্ষে ৬-৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। সেই নিয়মানুযায়ী অধিকাংশ বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হওয়ার পর প্রায় ২৫ বছর অতিবাহিত হলেও প্রতি বিষয়ের জন্য শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির অনুপাত বৃদ্ধি করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক সমিতির সভাপতি নেকবর হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভুলনীতি, সিদ্ধান্তহীনতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম গাফিলতির কারণেই আমরা বেতনভাতা পাচ্ছি না। আমাদের বেতনভাতা না দিলে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়া হলো কেন?’

নেকবর হোসাইন জানান, ‘২৩১টি অনার্স-মাস্টার্স কলেজের বঞ্চিত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য বছরে ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা ২১ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও পরিচালক অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। তারা এটা মন্ত্রণালয়ে জবা দেবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

এমপিও বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষক জানান, এমপিও সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নির্দেশ মোতাবেক অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স-মাস্টাস কলেজের শিক্ষকদের সরকারি স্কেল অনুযায়ী ২২,০০০ (বাইশ হাজার) টাকা বেতন দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শহর অঞ্চলের কয়েকটি কলেজ ব্যতীত দেশের প্রায় সব কলেজই নামমাত্র মাসিক দুই হাজার থেকে সাত হাজার টাকা সম্মানি দেয়া হয়।

তারা জানান, খ-কালীন ও ইন্টারমেডিয়েট পাঠদানকারী শিক্ষক দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে পাঠদান চলে। এতে কলেজের শিক্ষার খরচ ও বাণিজ্যিকীকরণ লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এভাবে গুণগত মানের উচ্চ শিক্ষার বিস্তার সম্ভব নয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের সব ধরনের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতেও বাধ্য থাকেন এমপি বঞ্চিত শিক্ষকরা। এমপিও’র আওতায় না আসায় তারা অভিজ্ঞতার নিরিখে টাইম স্কেল, পদোন্নতি এবং অবসর ভাতা পান না। পাচ্ছেন না সরকারি স্বীকৃতিও।

বৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েও বেতন ৩ হাজার আইসিটি শিক্ষকের : সরকার শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের আলোকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার স্তর পর্যন্ত আইসিটি বিষয় বা কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও স্কুলে পদ সৃষ্টিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু সরকার এ বিষয়টি বাধ্যতামূলক করেছে সেজন্য এক প্রজ্ঞাপনেই সব স্কুলে পদ সৃষ্টি করা উচিত। প্রতিষ্ঠানওয়ারি পদ সৃষ্টির প্রয়োজন নেই।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বরের পূর্বে যেসব প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয় অনুমোদন পেয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন। এতে করে প্রতিষ্ঠান প্রতি একজন করে সারাদেশের ১১ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষক এই সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু আইসিটি বিষয়ে নিয়োগ পেয়েও এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন না প্রায় ১৩শ’ জন শিক্ষক।

মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর জানায়, ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বরের পরিপত্রের কারণে অধিকাংশ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বা আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখে। কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ দিলেও বেতনভাতা দিচ্ছে না। এরকম এক হাজার ২৪৪ জন শিক্ষককে (বর্তমানে প্রায় ১৩শ’) এমপিও সুবিধা দেয়ার জন্য ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি তালিকা ও প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় মাউশি কর্তৃপক্ষ। সেটা ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে।

এছাড়া এমপিওভুক্ত প্রায় দুই হাজার নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নেই, পদও নেই বলে শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সূত্র: সংবাদ

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062398910522461