আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তুরষ্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, ভারতের আইপিএল ক্রিকেট, দেশ-বিদেশের নানা খবর শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ক্লাস রুমে বসে। পুস্তকের পাঠ্যসূচির ক্লাসে বসে কম্পিউটার থেকে ধারণা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একগাদা বই স্কুল ব্যাগে করে আনতে হচ্ছে না। এসব সুবিধা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে।
প্রযুক্তির সুবিধাকে শিক্ষার্থীদের হাতের কাছে পৌঁছে দিতে খুলনার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাসরুম। এ সব ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপ ও প্রিন্টার সরবরাহ করা হয়েছে।
শিক্ষা অফিসের সূত্র জানান, আইসিটি সেক্টরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ যুগপোযোগী পরিকল্পনা প্রণেয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি সেক্টরের সম্প্রসারণে জিওবি অর্থায়নে শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
জেলায় যেসব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, রায়েরমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসা, রূপসা উপজেলার কাজদিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নন্দনপুর দাখিল মাদরাসা, রূপসা মহাবিদ্যালয়, তেরখাদা উপজেলার চিত্রা মহিলা মহাবিদ্যালয়, শত দল মহাবিদ্যালয়, ইখড়িকাটেঙ্গা ফজলুল হক ইনস্টিটিউট, উত্তর খুলনা এসএমএ মজিদ স্মারক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দিঘলিয়া উপজেলার এমএম মজিদ ডিগ্রি কলেজ, সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাজীরহাট হাজী নৈমুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলতলা উপজেলার পাইগ্রাম কসবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দামোদর মুক্তময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলতলা মহিলা মহাবিদ্যালয়, ডুমুরিয়া উপজেলার কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বানিয়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বান্দা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বটিয়াঘাটা থানা হেড কোয়াটার্স পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাকোপ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, পাইকগাছা উপজেলার ফসিয়ার রহমান মহিলা মহাবিদ্যালয়, কপিলমুনি জাফর আওলিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, শহীদ কামরুল মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়রা উপজেলার ভাগবা এইচবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চান্নীচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল আমিন জানান, এখন থেকে শিক্ষার্থীদের একগাদা বই বহন করতে হবে না। শিশু শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাবে। ছাপা পাঠ্যপুস্তক না পেলেও অসুবিধা হবে না। ইন্টারনেট থেকে সকল পাঠ্যসূচি শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পাবে। এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আরো একধাপ এগিয়ে গেল।
ডিজিটাল ল্যাব পাওয়া আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল খায়ের জাকারিয়া বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় মাদরাসায় ১৭টি ল্যাপটপ ও স্ক্যানার পেয়েছি। সেই সঙ্গে প্রজেক্টরও দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ওয়াইফাই সুযোগও পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানের গড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটের খবর দেশ-বিদেশের সুখ-দুঃখের খবর সহজেই জানতে পারছে। মোট কথা গোটা পৃথিবীর খবরাখবর এখন শিক্ষার্থীদের হাতের মুঠোর মধ্যে।
এ প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণির দিবা বিভাগের ছাত্র আলিফ ইবনে আজাদ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা প্রাক্টিক্যাল ক্লাসেই পাঠ্যসূচি বুঝে নিচ্ছে। বিদেশের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
একই প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেণির দিবা বিভাগের শিক্ষার্থী চয়ন বিশ্বাস দীপ জানায়, বই-খাতা আনার প্রয়োজন হয় না। খেলার খবর জানতে টেলিভিশনের নিউজের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ল্যাপটপ অন করলেই খেলার প্রতি মুহূর্তের খবর পাওয়া যায়।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী এজাজ মাহমুদ জানায়, দেশ-বিদেশের সংবাদ জানতে সংবাদপত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। সংবাদপত্র হকারের জন্যও অপেক্ষা করার প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রতিদিনকার খবরাখবর ক্লাসরুমে বসে পাওয়া যাচ্ছে।