ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে ব্যাংকের শেষ কার্যদিবসেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পাননি। দৈনিক শিক্ষার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কাঠালিয়া (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ঈদ আনন্দ মাটি হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সোনালী ব্যাংকের শেষ কর্মদিবস হলেও ২৭ টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের ঈদের বোনাস হাতে পায়নি।
সোনালী ব্যাংক কাঠালিয়া শাখার ব্যবস্থাপক সঞ্জিব কুমার হালদার দুঃখ প্রকাশ করে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এ ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। ৩০ জুন এর মধ্যে ঈদ বোনাসের কোন ওর্ডার ব্যাংকে না আসায় আমরা শিক্ষক কর্মচারীদের বোনাস প্রস্তুত করতে পারিনি।
এদিকে উপজেলার রূপালী ব্যাংক কাঠালিয়া শাখায় ৩৬ টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের ঈদের বোনাস হাতে পেয়েছেন। এতে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, একই উপজেলায় এটা কি করে সম্ভব! আমাদের মাত্র দুটি ধর্মীয় উৎসব। এর মধ্যে ঈদুল ফিতর-ই বড়। কিন্তু ব্যাংকের শেষ কর্মদিবসেও আমরা বোনাসের টাকা হাতে পেলাম না।
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে ব্যাংকের শেষ কার্যদিবসেও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসার প্রায় ২’শ শিক্ষক-কর্মচারীর ঈদ বোনাসের স্মারক নম্বর এখনও আসেনি। ফলে উপজেলার ২’শ শিক্ষক পরিবারের এবার ঈদ আনন্দ মাটি হওয়ার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে আজই ব্যাংক কার্যদিবস শেষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকাল পর্যন্ত ঈদ বোনাসের তারিখ আজ ৩০ জুন শেষ তারিখ ছিল। গতকাল বুধবার ঈদ বোনাসের টাকা আসলেও আজ সকাল পর্যন্ত স্মারক কপি আসেনি। ১ জুলাই থেকে সরকারি ছুটি থাকায় আজ বিকেলে স্মারক কপি আসলেও তাদের বোনাসের অর্থ দেয়া সম্ভব না।
এ বিষয়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী দুঃখ করে বলেন, আসলে আমাদের কোন ধর্মীয় উৎসব নেই। কাজেই বিশ্বের আনন্দের সাথে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ করার ভাগ্যে নেই। বউ বাচ্চারা নতুন পোষাক আর ঈদের বাহারি রকমের খাবার কেনাকাটা করার জন্য তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে আর আমরা তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি বেতন বোনাসের দিকে।
রায়গঞ্জ উপজেলার সোনালী ব্যাংক ধানগড়া শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার বেতন নয় বোনাসের টাকা এসেছে। কিন্তু স্মারক না আসায় ঈদের আগে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের অভয়নগর উপজেলার সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষকেরা ঈদ বোনাসের টাকা সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেও ব্যাংকে জমা দিতে পারেননি। ফলে ঈদ বোনাসের বিল ব্যাংকে জমা না হওয়ায় শত শত শিক্ষক বৃহস্পতিবার দিনভর ব্যাংকে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে খালি হাতে বাড়িতে ফিরলেন।
জানাগেছে, অভয়নগর উপজেলায় বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সহস্রাধিক শিক্ষক রয়েছেন। বর্তমান সরকার নতুন স্কেলে তাদের বেতন-ভাতা প্রদান করলেও চলতি জুন মাসের বেতন এখনও ছাড়েনি। ফলে অনেক আশায় রয়েছেন তারা নতুন স্কেলে ঈদের বোনাস তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন।
কিন্তু শেষ দিনেও ব্যাংকে ঈদ বোনাসের কোন অর্ডার না আসায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বোনাসের বিল জমা নিতে পারেনি। ফলে শিক্ষকরা ঈদের বোনাস না পেয়ে খালি হাতে বাড়িতে ফিরলেন।
বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমগীর হোসেন জানান, দেশের অন্যান্য স্থানে শিক্ষকেরা ঈদের বোনাস পেলেও আমরা এখনও হাতে পায়নি। ২/১ দিনের মধ্যে ব্যাংক বন্ধ হলে কিভাবে শিক্ষকেরা ঈদ বোনাসের টাকা তুলবে এটা আমি ভাবতে পারছি না।
সোনালী ব্যাংকের নওয়াপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক মো. মহাসীন আলী জানান, যেহেতু আগামী শনি ও রোববার বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক খোলা থাকবে আশা করছি ওই দুদিনের মধ্যে হয়তবা শিক্ষকদের বোনাসের টাকা পরিশোধ করতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাসও জুটলো না চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার এমপিওভুক্ত ৩৪টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৮ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর ভাগ্যে। ঈদ বোনাস নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইদুর বিড়াল খেলা আর সোনালী ব্যাংকের ক্ষমাহীন গাফলতির কারনে ঈদ বোনাসের স্মারক নম্বর ব্যাংকের শেষ কার্য দিবসেও এসে পৌঁছাইনি । ফলে উপজেলার ৮শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ প- হতে বসেছে।
জানা গেছে, গত সোমবার নানা নাটকীয়তার পর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পর ঈদ বোনাসের অর্থ ছাড় করা হয় এবং গতকাল বৃহ¯পতিবার (৩০ জুন) ছিল উক্ত টাকা উত্তোলনের শেষ তারিখ। বোনাসের টাকা উত্তোলনের জন্য সকাল থেকেই শিক্ষক কর্মচারীরা জীবননগর সোনালী ব্যাংকে এসে ভীড় জমায়, কিন্তু সারাদিনের অপেক্ষার পর বিকালে জানিয়ে দেয়া হয় আর বোনাস দেয়া সম্ভব নয়। এখনো পর্যন্ত স্মারক কপি আসেনি। ১ জুলাই থেকে সরকারি ছুটি থাকায় ঈদের আগে আর তাদের বোনাসের অর্থ দেয়া সম্ভব হবে না।
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঈদ বোনাস পাননি। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) টাকা উত্তোলনের শেষ দিন হলেও ব্যাংক চলাকালীন সময় পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক নকলা শাখায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসেনি।
এর ফলে শিক্ষক কর্মচারীরা ঈদ বোনাস উত্তোলন করতে পারেননি। এতে করে রোজার মাসেও নিদিষ্ট সময়ে ঈদ বোনাস না পেয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশসহ হতাশ হয়ে পড়েছেন। আর ব্যাংক খোলা না থাকলে ঈদের আগে ঈদ বোনাস পাওয়ার সম্ভবনা নেই। এতে করে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেন শিক্ষক পরিবার। অথচ সরকারি কর্মচারীরা জুনের বেতন ভাতাসহ ১ মাসের বেতনের সমপরিমান বোনাস পেয়েছেন ২৫ জুনের মধ্যে।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ব্যাংকে ভীড় জমালেও ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এখনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে এসে পৌছায়নি। তাই তাদের ঈদ বোনাস বিল জমা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই ব্যাংকের এটা যেন নিয়মিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ সময় এ ব্যাংকে নির্ধারিত সময়ে বেতন বিলের কাগজ আসে না।