বর্তমানে কিছু শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে পড়ানোর কৌশল তৈরি করেছেন। বাড়িতে পড়িয়ে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে নিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষকদের এ অনৈতিক ‘ব্যবসা’ চলছে অনেকদিন ধরেই। তবে আমরা মনে করি, কিছু শিক্ষক নয়, বরং বেশিরভাগ শিক্ষকই স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। তারা শ্রেণীকক্ষে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে সঠিক পাঠদানের পরিবর্তে তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য প্রচ্ছন্নভাবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
আবার অনেক সময় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও এক ধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেণী শিক্ষকের কাছে কোচিংয়ে পড়াতে। কিন্তু সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ যেহেতু শিক্ষকদের বেতন দেয়, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস নেয়া তাদের দায়িত্ব। প্রশ্ন হলো, তারা যখন দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় তখন কি করে? অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কাজটি হয় না কেন?
নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে ওঠা এ বিপুলসংখ্যক কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট পড়ানোর স্থানগুলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ছাত্রছাত্রীদের যে জিম্মি করে ফেলছে তা সুস্পষ্ট। আবার এটাও ঠিক যে, শ্রেণীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। দীর্ঘদিন থেকেই প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সাড়ে ৬ বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা মনে করি, এমন কোনো আইন করে বসে থাকলে চলবে না আসলে যার কোন প্রায়োগিক বাস্তবতা নেই। শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও মনোযোগ দিতে হবে। কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরি। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের জোরালো ভূমিকা রয়েছে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার ব্যাপারে। তাদের ‘কোচিং পড়ানোর’ পেছনে ছোটা বন্ধ করতে হবে। এ শিক্ষা-সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই।
সূত্র: সংবাদ