আবারও সাইফুরস কোচিংয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে সাইফুরস নামে একজন শিক্ষক আছেন, সেই নাম দিয়ে ব্যাপক কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
শনিবার (২৫ জুন) সকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এভাবেই সমালোচনা করেন সাইফুরস কোচিংয়ের।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাইফুরস একজন শিক্ষক হয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন- ভালো ইংরেজি শিখতে হবে, তা-না হলে তুমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হতে পারবে না। এমনকি ভালো বেকারও হতে পারবে না। চিন্তা করে দেখেন, কোন জায়গায় আমরা বসবাস করছি!
একজন শিক্ষক বলছেন, তুমি ভালো চোর হতে গেলেও আমার কাছে এসে পড়। এজন্য আমি দুদককে বলেছিলাম। দুদককে ধন্যবাদ জানাই, তার নামে সমন জারি করেছে, তাকে (সাইফুরসকে) জবাব দিতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তি নিয়ে সংসদ সদস্যদের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবারই দাবি এমপিও ভুক্তি। আমরা জানি, এটা একটা বড় সমস্যা। সমস্যা থাকলেও সমাধান বের করতে হবে, আমরা নানা বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করছি এবং কোনো না কোনো পথ আমরা বের করবোই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বিশ্বমানের শিক্ষা। শুধু জ্ঞান এবং প্রযুক্তি দিয়ে মাথা ভর্তি করলেই চলবে না। সেই সাথে সৎ, নিষ্ঠাবান, ভালো মানুষ তৈরি করতে হবে। দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তি শুধু ভালো কাজেই লাগে না, খারাপও করে। এই যেমন আমাদের ব্যাংকের টাকা চুরি করে নিয়ে গেলো। তাই আমাদের লক্ষ্য ভালো মানুষ ও দেশপ্রেমিক মানুষ গড়ে তোলা।
জানুয়ারি মাসেই নতুন বই বিতরণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ৫টি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় বই ছাপছি। সেই সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা দিতে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে সাইফুর’স এর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য লিখিতভাবে সুপারিশ আসে। সেখানে কোচিং সেন্টারটির অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। প্রাথমিকভাবে যাচাই করে অভিযোগটি যথাযথ বলে মনে হওয়ায় সাইফুর’স এর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে দুদকের একজন কর্মকর্তাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হবে।
এ অভিযোগ অনুসন্ধানে সাইফুর’স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান খানকে দুদকের মুখোমুখি হতে হবে। সেই সঙ্গে কোচিং সেন্টারটির আয়-ব্যয়ের সব হিসাব পেশ ও সব আয়কর নথিও খতিয়ে দেখবে দুদক। এছাড়া ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সাইফুর’স কোনো ধরনের প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ ‘দক্ষ হ্যাকার তৈরির’ আপত্তিকর বিজ্ঞাপন দেয়ায় সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ মামলা করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। অভিযোগ উঠেছিল, এ বিজ্ঞাপনে হ্যাকিংকে উৎসাহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতে সম্পৃক্ত হ্যাকারদের পক্ষাবলম্বন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিতে শিক্ষা সচিবকে নির্দেশ দেন।
দক্ষ হ্যাকার তৈরির বিষয়ে সাইফুর’স কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে এ সংক্রান্ত নথিতে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী লিখিত নির্দেশে বলেন, ‘এ বিষয়টি মারাত্মক। এ বিষয়ে সিরিয়াসলি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।’
এ নথিতে শিক্ষামন্ত্রী গত ২৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে জানিয়ে কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে চার ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সচিবকে নির্দেশ দেন। এ চারটি পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- থানায় সাইফুর’স কোচিংয়ের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা, মামলা দায়ের, দুদকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা।