সন্তানের হাতে বই তুলে দিন - দৈনিকশিক্ষা

সন্তানের হাতে বই তুলে দিন

মুহাম্মদ নাজমুল হক |

একটা সময় ছিল যখন বই ছিল জ্ঞান আহরণের এবং বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। মানুষ অবসর সময় কাটাতে বা বিনোদনের জন্য বইয়ের মধ্যে ডুবে যেত। পড়তে পড়তে কল্পনায় মনের কোণে নানা দৃশ্যপট তৈরি করত। কষ্টের কাহিনি পড়ে ব্যথিত হতো। সুখের কাহিনি পড়ে আনন্দিত হতো, পুলকিত হতো। একটি ভালো বই ঘুরে বেড়াত এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের হাতে। বন্ধু বা পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে বইপড়া ছিল নেশার মতো। আমার মনে আছে, আমি তখন ছোট। আমাদের বাড়ির পাশের এক বড়ভাইয়ের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। তাঁর নাম ছিল সূর্য। আমরা সূর্যভাই বলে ডাকতাম। তাঁদের বাড়ির বাইরে কাচারি ঘরে বসে তিনি বই পড়তেন। মাঝে মধ্যে আমি তাঁর সঙ্গে বসে গল্প করতাম। অনেক সময় তিনি বই পড়ে আমাকে শোনাতেন। আমার এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময় কাটাতে তাঁর কাছ থেকে ধার নিয়ে অনেক বই পড়েছি। উনিও আমাকে আগ্রহ নিয়ে বই দিয়েছেন। ভালো ভালো বই দিয়ে তা পড়তে উত্সাহিত করেছেন। আর এখন আমাদের পাড়া-অঞ্চলের অনেক বড়ভাই আছে যারা রাজনেতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যুবক ছেলেদের বিপথগামী করছে। মাস্তানি শেখাচ্ছে। কিশোরদের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে।

আজ আমাদের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ প্রযুক্তির জালে আচ্ছন্ন। এখন আর বিনোদন মাধ্যমের অভাব নেই। সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। তাই হয়তো  বইয়ের জায়গাটা তরুণ সমাজের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পিছনে সময় ব্যয় করার চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। রাত-দিন ডুবে থাকে ফেসবুক-ইন্টারনেটের রঙিন দুনিয়ায়। সমাজ উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজন আছে। কিন্তু এসব প্রযুক্তির অপব্যবহার সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। প্রযুক্তির ভালো ও মন্দ উভয় দিকই আছে। সেই ভালোটাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। ভালো কাজে প্রযুক্তির মাঝে ডুবে থাকা দোষের কিছু নয়। তবে বই থেকে মুখ সরিয়ে নেওয়া শুভ লক্ষণ নয়। কারণ বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষের জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। হূদয় পরিপুষ্ট হয়। মনুষ্যত্বও বিকশিত হয়। জাতি আলোকিত হয়। জ্ঞানকে কাজে লাগাতে যে কল্পনাশক্তির প্রয়োজন—বই মানুষের সেই কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয়।

প্রযুক্তি তার নিজের জায়গায় থাকবে। পাশাপাশি বইকেও তার নিজের আসনে ধরে রাখতে হবে। বই মানুষকে আনন্দ দেয়। মনে শক্তি জোগায়। একটি বই হতে পারে একটি জাতির উন্নয়নের পাথেয়। যদিও বই কোনো অলৌকিক জিনিস নয়। তথাপি এর অন্তর্নিহিত শক্তি যে কোনো অলৌকিকতাকে হার মানায়। বিখ্যাত রুশ লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি বইপড়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘জীবন নিতান্তই এক ঘেয়ে, দুঃখ-কষ্টে ভরা। কিন্তু মানুষ বইপড়তে বসলেই সব ভুলে যায়।’ বিভিন্ন লেখক ও চিন্তকেরা এভাবেই বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। আসলে তাই-ই। বই যেমন দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়, তেমনি মানুষের মনের দুর্বলতাকে কাটিয়ে সাহসী করে তোলে। যে সাহস দুর্গম আর অন্ধকারকে জয় করতে পারে সহজেই।

আমাদের সন্তানদের ইংরেজি স্কুলে পড়িয়ে অনর্গল ইংরেজি বলতে পারা বা জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়াই শিক্ষা নয়। এ শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যত্ ভালো নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে। এ সংকট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় তাদের হাতে ভালো বই তুলে দেওয়া। সন্তানদের শুধু ক্লাসের বই নয়, তাদের হাতে বাইরের বই তুলে দিতে হবে। যা তাদের অনুসন্ধিত্সু মনকে উসকে দেবে। উত্সাহিত করবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও সংস্কৃতি চর্চার দিকে।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031797885894775