১৯৪৮ সালে দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে অঙ্কুরিত বীজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতির মশাল নিয়ে জাতীয় সব সংকটে, সংগ্রামে ও সম্ভাবনায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আজ ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে সুবিস্তীর্ণ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগের ঐতিহ্যবাহী পতাকাতলে আজ লাখো তরুণপ্রাণ। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিধৌত।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজ হাতে গড়া সংগঠন, তার জীবন ও যৌবনের সমর্পিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা সংগঠন, তার সোনার বাংলা বিনির্মাণের সুদক্ষ কর্মী গড়ার পাঠশালা- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জন্মলগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘপথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিজেদের জীবন অকাতরে উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজন বোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দিব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করব না।’ বঙ্গবন্ধুর কথাতেই তার একান্ত অনুগত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সতেরো হাজার নেতাকর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। সেসব বীর যোদ্ধাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু যখন এ দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করছিলেন, ঠিক তখনই পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের নীল নকশা অনুযায়ী কিছু এ দেশীয় কুলাঙ্গার আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে রাজপথে প্রথম যে মিছিলটি হয়েছিল সেই মিছিলের অগ্রসৈনিক ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর এক হৃদয়বিদারক অথচ উদ্দীপক স্লোগানে মুখোরিত হয়- ‘এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে’।
পিতা হারানোর বেদনাহত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুজিববিহীন বাংলায় আমাদের প্রিয় নেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশকে যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল, সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে প্রত্যাবর্তন করলেন আমাদের প্রাণের নেত্রী শেখ হাসিনা। প্রিয় নেত্রীকে ফিরে পেয়ে ছাত্রলীগ নবোদ্যমে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়ে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের আইলায় বিধ্বস্ত জনপদের মানুষের প্রতি ছাত্রলীগ বাড়িয়ে দিয়েছে মানবতার হাত। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ পাঠদান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের চর্চা। এ ছাড়া ‘ক্লিন ক্যাম্পাস-সেফ ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি ছাত্রলীগকে দিয়েছে বহুমাত্রিকতা।
আমাদের অভিভাবক, প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘উন্নত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়তে চাই। কারণ আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো নেতৃত্ব আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে আদর্শবান নেতা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে।’ ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী এখন নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলছে।
ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রিয় নেত্রী বলেছেন, ‘কেউ যেন বিপথে না যায়, তা দেখতে হবে। অসৎ পথে চলার পথ আমাদের না। আমাদের চলতে হবে, একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে।’ আমরাও আমাদের নেত্রীর কাছে নীতি ও আদর্শিক অক্ষুণ্ণতার প্রসঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সেশনজট নেই, শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করছে। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত বসে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা ও চাহিদার কথা প্রশাসনকে জানাচ্ছে, প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে বহুমাত্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিচ্ছে।
ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করতে হবে। মাননীয় নেত্রী বলেছেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তাদের দোসর এবং এ দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা একজোট হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’ সুতরাং আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশের সব অর্জনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম। তাই তো দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করবে ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ভূমিকা পালন করব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ একটি দেশ। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। মাননীয় নেত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থাকবে প্রাণভোমরার ভূমিকায়।
স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা। অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে, সব অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে, দেশগড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর শপথ।