সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হোক - দৈনিকশিক্ষা

সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হোক

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে রক্ত দিয়েছিলেন এ দেশের দামাল ছেলেরা। জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সেই সব বীর শহীদদের। ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনারগুলো। আমরা জানি বায়ান্নর মাতৃভাষার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধিকারের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা লাভ। তাই শহীদ মিনার শুধু ভাষা সংগ্রামের স্মারকই নয়; সব অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, দুঃশাসন অবসানের জন্য সংগ্রামের প্রতীক।

দেশের আগাম প্রজন্মের মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে সঙ্গে দেশাত্ববোধ, ইতিহাস-এতিহ্য চেতনা জাগ্রত করার প্রয়োজনে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাঞ্ছনীয়। দেশে সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। আর এ দিবস পালন মানেই শহীদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা। অথচ দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পেরিয়ে এসেও এখনো আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

যশোরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যশোর জেলায় মোট ১ হাজার ১৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৮৮৫টিতে। আর এ কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।

সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিশু ও তরুণ শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস জ্ঞান থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। ভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। এটি শুধু যশোরের চিত্র নয়। খোঁজ নিলে জানা যাবে, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একই। দেশের অন্যান্য এলাকা নিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট থেকে।

বায়ান্নর ভাষা শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার আজ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলা ও মিলনতীর্থ হিসেবে পরিণত হয়েছে। সব আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার উঠছে এই শহীদ মিনার। আজকের শিশু আগামী দিনের ধারক, বাহক; তারাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের হাতে থাকবে সমাজ উন্নয়ন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার দায়িত্ব। তাদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান-ভালোবাসা জন্ম দেয়া, ভাষা-সংস্কৃতির জন্য আত্মোৎসর্গ করা, শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা, তাদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শহীদ মিনার একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেই জন্যই প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি।

বিশাল জায়গা নিয়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে সুউচ্চ দর্শনীয় শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে তা নয়। স্বল্প ব্যয়েই নির্মিত হতে পারে স্কুলের শহীদ মিনার। এ সরকারি খরচে বা স্থানীয় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এটি হতে পারে। এর জন্য দরকার আন্তরিক উদ্যোগ।

সরকারের তরফ থেকে কেন এরকম একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। শহীদ মিনার নির্মাণ এবং আগামী প্রজন্মকে শহীদ মিনারের গুরুত্ব, তাৎপর্য জানানো খুবই জরুরি। এটাও লক্ষণীয় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে শহীদ মিনারগুলো রয়েছে, সেগুলো ২১ ফেব্রুয়ারিসহ বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া সারা বছর থাকে অবহেলা ও দৈন্যদশায়। আমরা মনে করি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা দিবসের গুরুত্ব ও যথার্থতা জানাতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের পাশাপাশি স্থাপিত শহীদ মিনারগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

সূত্র: ভোরের কাগজ

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089609622955322