ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ। ওই কলেজটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে- যার ১৫ সদস্যের পরিচালনা কমিটির ওই পদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সনাল রয়েছেন।
২৫ জুলাই কাজী ফিরোজ রশিদের পক্ষে আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশটি পাঠান। নোটিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে জবাব না পাওয়ায় আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন কাজী ফিরোজ রশিদ। নোটিশে বলা হয়, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের জমিতেই ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই একে অপরের পরিপূরক।
যেহেতু ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কাজী ফিরোজ রশিদ দায়িত্ব পালন করছেন, সেহেতু ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও একই ব্যক্তি হওয়া দরকার। এ অবস্থায় দুটি সম্পূর্ণ আলাদা কমিটি কলেজ ও হাসপাতালে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করায় উভয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কাজে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। এতে দুটি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এটা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানিজিং কমিটি) প্রবিধানমালা ২০০৯-এর আওতায় পড়ে না। ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পরিচালনা কমিটির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। কারণ এ প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নয়।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালটি ১৯২৫ সালে ব্রিটিশবিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অতীত রেকর্ডে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে উভয় প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্যরাই সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন- যা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, শুধু আইনগত কিছু জটিলতার কারণে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পরিচালনা কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এবং ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালনা কমিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত হয়ে আসছে।
জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, সাবেক এমপি মরহুম সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার সাবেক মেয়র মরহুম মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মিজানুর রহমান খান ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং ঢাকার ডেপুটি মেয়র মরহুম জাহাঙ্গীর মো. আদেল ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের জন্য আলাদা পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে আমাকে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়নি। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সব পরিচালনা কমিটি, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উভয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এক ব্যক্তি হওয়ায় সব কাজ সুচারুরূপে হয়েছে।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আশ্চর্যের বিষয় ওই নবগঠিত কমিটিতে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালককেও সদস্য রাখা হয়নি- যা সত্যি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। তাই আগের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পরিচালনা কমিটিরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করার কথা। এ অবস্থায় দুটি সম্পূর্ণ আলাদা কমিটি হাসপাতাল ও কলেজে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করায় উভয়ের মধ্য সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় দুটি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসির কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করে কোনো ফল না পাওয়ায় আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট করা হবে।